চালকের পরের সিটে বসে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ১০-১২ জন লোক বাসে উঠে চালক-হেলপারকে মারধর শুরু করে। আমার কাছে এসে দুল চাইলে আমি বলি, এগুলো সোনার নয়, তামার। তবুও রক্ষা হয়নি। কান ছিঁড়ে দুল ছিনিয়ে নেয় ডাকাত দল। পরে হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করে। আমি নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার ঘাড়ের ওপর মারধর করে জোর করে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

হাসপাতালের বিছানায় কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন এক মা। সোমবার (২৩ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ডাকাতির ঘটনায় ছেলের অপারেশনের দুই লাখ ১০ হাজার টাকা হারিয়ে অঝোরে কাঁদছেন মা নুসিয়া বেগম। বাড়ির শেষ সম্বল পাওয়ার টিলার বিক্রি করে ছেলের অপারেশনের জন্য টাকা নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন তিনি।

নুসিয়া বেগম বলেন, ঢাকাতে ছেলের অপারেশনের জন্য নিজেদের শেষ সম্বল পাওয়ার টিলার বিক্রি করে রওনা দিয়েছিলাম। সোমবার (২৩ আগস্ট) রাতে বাস ছাড়ার আধা ঘণ্টা পর চালক হঠাৎ বাস থামায়। অন্ধকার হওয়ায় কোথায় বাসায় থামিয়েছে তা দেখা যাচ্ছিল না। চালককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাস্তায় কোনো ঝামেলা হয়েছে হয়তো। তার কিছুক্ষণ পরেই ডাকাত দল আমাদের বাসে হানা দেয়। 

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নুসিয়া বেগম আরও বলেন, আমার ছেলের পায়ের একটা রগ ছেঁড়া। রাজশাহীতে চিকিৎসা করা অবস্থায় ডাক্তাররা বলেছেন অপারেশন করাতে হবে। তাই গত দুদিন থেকে ঢাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। বাড়িতে থাকা সচল ও শেষ সম্বল পাওয়ার টিলার বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছিলাম ছেলের অপারেশনের জন্য। ডাকাতরা এভাবে সেই টাকা ছিনিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে দিল। এখন ছেলেকে আমি কিভাবে ভালো করব?

তিনি বলেন, আমার কান ছিঁড়ে দুইটা দুল নিয়েছে, তাতে কোনো আক্ষেপ নেই। কিন্তু ছেলের জন্য অপারেশন করার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ায় খুব বিপদে পড়ে গেলাম। এখন আমার ছেলের অপারেশন হবে কেমন করে?

সোমবার (২৩ আগস্ট) চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা নাইট কোচ চাঁপাই ট্রাভেলস, সাথী এন্টারপ্রাইজ, জমজম এন্টারপ্রাইজ, আমভর্তি ট্রাক, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ ৩০-৩২টি পরিবহনের গতিরোধ করে ডাকাতি করে। 

ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, আমি খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্দেহভাজন পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি