হানিফ সংকেতকে অনুকরণ করে তিনি এখন আনোয়ার সংক্ষেপ
দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করে দর্শকনন্দিত উপস্থাপকের খেতাব অর্জন করেছেন হানিফ সংকেত। তার সাবলীল উপস্থাপনা দিয়ে তিনি বাংলাদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
দেশে কর্মরত অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীকে অনুকরণ করার অনেক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু হানিফ সংকেতকে অনুকরণ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, এমন নজির এখনো পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
তবে বেশ কয়েক দিন ধরে হানিফ সংকেতকে অনুকরণ-অনুসরণ করে উপস্থাপনা করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে যিনি উপস্থাপনা করেছেন, তিনি আনোয়ার হোসেন। যাকে সবাই ‘আনোয়ার সংক্ষেপ’ নামেই চেনে।
রোববার (২২ আগস্ট) দৌলতদিয়া রেলস্টেশন এলাকায় হানিফ সংকেতের অনুরূপ উপস্থাপনা করেন। এ সময় ধারণ করা পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিও ‘ইব্রাহিম সুলতান’ নামের এক ফেসবুক আইডিতে আপলোড করা হয়। পরে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দ্রুত ভাইরাল হতে থাকেন তিনি। এখন পর্যন্ত সেই ভিডিও ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ দেখেছে বলে জানা গেছে। এর পর থেকেই আলোচনায় আসেন আনোয়ার।
আনোয়ার সংক্ষেপের (৩৩) জন্ম ১৯৮৮ সালে, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নে। স্থানীয় স্কুল ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ২০১৫ সালে ভূগোলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এরপর তিনি একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি নেন। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনি প্রায় বেকার বসে আছেন। চার বছরের ছোট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট সংসার।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে আনোয়ার সংক্ষেপের বাড়িতে দেখা যায়, ছোট্ট একটি টিনের ঘরে স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন আনোয়ার। টিনের বেড়ায় ঝোলানো রয়েছে যাকে আদর্শ মানেন, সেই প্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেতের বেশ কয়েকটি ছবি।
একান্ত আলাপকালে আনোয়ার সংক্ষেপ ঢাকা পোস্টকে জানান সৃষ্টিশীল কিছু করার কথা। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইত্যাদি অনুষ্ঠান ভালোবাসি এবং উপস্থাপক হানিফ সংকেতকে ভালোবাসি। তাকে অনুকরণ করে উপস্থাপনা শিখেছি। আমি হানিফ সংকেতের বাচনভঙ্গিকে অনুকরণ করে উপস্থাপনার চেষ্টা করি। গ্রামে জন্মদিন, সুন্নতে খাতনা, বিয়ে, কনসার্ট হলেই আমি সেখানে উপস্থাপনা করে থাকি। হানিফ সংকেতের মতো উপস্থাপনা করার কারণে সবাই আমাকে আনোয়ার সংক্ষেপ বলেই উপাধি দিয়েছে।
হানিফ সংকেতের সঙ্গে মিল রেখে ‘আনোয়ার সংকেত’ না হয়ে ‘আনোয়ার সংক্ষেপ’ কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে হানিফ সংকেত একজন। তা আর কেউ হতে পারবে না। লোকে আমাকে আনোয়ার সংকেত বলে ডাকলেও আমি সেটা গ্রহণ করি না হানিফ সংকেতের সম্মানে।
এর আগেও এটিএন বাংলা, এনটিভির বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি। তবে তখন এতটা আলোচনায় আসেননি তিনি।
আনোয়ার সংক্ষেপের মা বলেন, ছোটবেলা থেকে আনোয়ার ইত্যাদি অনুষ্ঠান পছন্দ করে। ইত্যাদি শুরু হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অনুষ্ঠান দেখে। এরপর সে নিজে নিজে ইত্যাদির মতো উপস্থাপনা শুরু করে। তখন তো ইন্টারনেট ছিল না। এখন প্রতিনিয়ত মোবাইলে ইত্যাদি অনুষ্ঠান দেখে।
আনোয়ার সংক্ষেপ নিয়ে স্থানীয় সোহেল রানা বলেন, আনোয়ার একজন সংগ্রামী ব্যক্তি। কষ্ট করে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন। একটি চাকরির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে পড়ান। মানুষ হিসেবে আনোয়ার অসাধারণ একজন মানুষ। কোনো দিন হয়তো তিনি বড় হয়ে ভালো উপস্থাপক কিংবা নির্মাতা হবেন।
আনোয়ারকে নিয়ে ভিডিও নির্মাণ করা সেই ইব্রাহিম সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিয়মিত বিভিন্ন কনটেন্ট নিয়ে ভিডিও নির্মাণ করি এবং সেসব ভিডিও আমার নিজের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করি। কিছুদিন আগে দৌলতদিয়া রেলস্টেশন এলাকায় ঘোরাঘুরি করার এক পর্যায়ে তাকে বলি যৌনপল্লি আর স্টেশন নিয়ে উপস্থাপনা করতে। তখন আমি তার ভিডিও ধারণ করি এবং সেই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করি।
তারপর থেকেই সারাদেশের মানুষের কাছে ভিডিওটি ব্যাপক আলোচনায় আসে। প্রায় ৫০ লাখেরও বেশি ভিউ হয়। আনোয়ার ভাই ভালো মানুষ। তার মধ্যে প্রতিভা আছে। তিনি একসময় ভালো কিছু করবেন বলে আশা করি।
আনোয়ার বলেন, ইব্রাহিমের সঙ্গে আমার অনেক দিনের পরিচয়। ইব্রাহিম আমার বন্ধু। সে জানত আমি হানিফ সংকেতের মতো উপস্থাপনা করি। দৌলতদিয়া রেলস্টেশন এলাকায় ঘুরতে গেলে সে সেভাবে উপস্থাপনা করার জন্য অনুরোধ করে। তখন আমি গোয়ালন্দের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লি নিয়ে শিক্ষামূলক উপস্থাপনা করি।
এরপর সে এর ভিডিও ফেসবুক পেজে আপলোড করে। পরে ব্যাপক সাড়া পড়ে। তখন থেকেই আলোচনায় আসি আমি। যদি সুযোগ পাই মিডিয়ায় কাজ করব। আরও কিছুদিন চেষ্টা করব। যদি এতে কাজ না হয়, তবে একটি চাকরি করে সংসার চালাব।
এনএ