মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পদ্মার চরের বাসিন্দারা শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে আছেন

খুদেজা বেগম (৬০)। অসুস্থ স্বামী ও দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পদ্মার চরে বসবাস করছেন। বসবাসের জন্য খড়, ধইঞ্চা, পাটখড়ি দিয়ে উন্মুক্ত চরে তৈরি করেছেন কুঁড়ে ঘর। 

খুদেজা বেগমের দেশের বাড়ি নেত্রকোনায়। চার সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি নিজেই। সারাদিন কাজ করে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রোজগার করেন তিনি। তা দিয়ে সংসারের ছোট্ট চুলায় আগুন জ্বলে, তবে দিনে নয় রাতে। 

সরেজমিনে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় চরাঞ্চলে অস্থায়ী শতাধিক ছোট ছোট খড়কুটোর ঘরের দেখা যায়। সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা নেত্রকোনার। এছাড়াও রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামের মানুষজনও রয়েছে। তারা মূলত মুন্সিগঞ্জে আলু রোপণ ও উত্তোলনসহ কৃষি কাজ করতে এসেছেন।

খুদেজা বলেন, এবার একখান কম্বল পাইছি বাজান। কিন্তু কম্বলটা একেবারে হাতলা। হাতলা কম্বলে শীত মানে না। যদি কায়ো কম্বল দিবার চায় তাক কন, য্যান ভাল একখান কম্বল দেয়।

অস্থায়ী এ সকল বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রতি বছর আলু রোপণের সময় এই জেলায় আসেন। আলুর জমি পরিচর্যাসহ অন্যান্য কৃষিকাজ করে থাকেন এবং উত্তোলন শেষে নিজ জেলায় ফিরে যান। এতে শীতের পুরোটা সময় খড়কুটোর এসব ঘরে বসবাস করতে হয়। উন্মুক্ত চরে গাছপালা না থাকায় হিমেল হাওয়ায় শীতে জড়সড় হয়ে থাকে তারা।

খুদেজা বেগম আরও বলেন, আমার চার ছেলে। কোনো মেয়ে নেই। এক ছেলে দেশের বাড়িতে থাকেন। বাকি দুই ছেলে এই জেলায় বদলি কামলা দেয়। তারা আমার খোঁজখবর নেয় না, পৃথক থাকে। আর এই নাতি-নাতনির মা আরও ৫ থেকে ৬ বছর আগে আমার ছেলেকে রেখে চলে যায়। পরে আমার ছেলেটারও কোনো খোঁজ পায়নি। বুড়ো বয়সে এখন ওদের দায়িত্ব আমার কাঁধে পড়েছে। এখন দুইবেলা মুখে খাবার দিব নাকি শীতের পোশাক দিব। অন্যদিকে বুড়ো স্বামীর অজানা রোগে একটি পা প্যারালাইসিস হয়ে গেছে।

খুদেজার মতো বৃদ্ধ আলী হোসেন (৬৫) একটি খড়ের ঘরে বসবাস করেন। কিন্তু রাতে ঘরের ভেতর চারপাশ দিয়ে বাতাস ঢোকে। এতে শীতে তিনি খুব কষ্ট করছেন। তিনি বলেন, বুড়া মানুষগোরে শীত বেশি। রাতে শীতে ঘুমাবার পাই না। খ্যাতা দিয়া ওম হয় না। খ্যাতাও ছেঁড়া। কত কষ্ট কইর‌্যা শীতে থাকি। কয়েকজন কম্বল দিয়া গেছে। এত হাতল, যা দিয়া ঠান্ডা কমে না।

কুড়িগ্রাম থেকে মুন্সিগঞ্জে চুক্তিতে আলু রোপণ করতে এসেছেন দিদার মিয়া (৪৫) । তিন মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে ৭ সদস্যের অভাবের সংসার তার। কোনোমতে খড়কুটো দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করেছেন তিনি।

দিদার মিয়া বলেন, ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। জমিতে গিয়ে কাজ করাটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে নদী এলাকায় বাতাস বইছে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় আমাদের নিদারুণ কষ্টে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভীন বলেন, এ বছর সরকারিভাবে উপজেলার অসহায় শীতার্তদের মাঝে ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি ভাসমান অস্থায়ী শীতার্তদের মধ্যেও কম্বল বিতরণ করা হয়।

মুন্সিগঞ্জ সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। তাই সকলকে সচেতন থাকতে হবে। ঠান্ডাকাশি থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। তবে শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েবের আশঙ্কা করেছিলাম সেটা এখন পর্যন্ত তেমনভাবে দেখা যায়নি।

এসপি