বণিক শ্রেণি ও নব্য সুবিধাভোগীদের কাছে সিলেট বিএনপি জিম্মি হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক। সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সিলেট নগরের মিরাবাজারের শ্যামল সিলেট হল রুমে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রাজ্জাক সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। পাশাপাশি দলটির আদর্শিক কর্মী হারিয়ে ফেলার শঙ্কাও প্রকাশ করেন। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, দলটির আদর্শিক কর্মী যদি হারিয়ে যায় তাহলে শহীদ জিয়ার আদর্শ হারিয়ে যাবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি যখন বাংলাদেশের সকল মানুষের দাবি, এই দাবিটিকে পূরণ করার জন্য যেসকল নেতৃত্ব দলে প্রয়োজন তা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজকে যদি বণিক শ্রেণি ও নব্য সুবিধাভোগী চক্রের কাছে দল জিম্মি হয়ে যায় তাহলে দল এবং জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ছাত্রদলের গঠন প্রক্রিয়ায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল রহস্যজনকভাবে তাদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। মর্মান্তিক হল এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকেও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

যুবদলের কমিটি ও কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি গঠনের সময় যারা তিল তিল করে যুবদলকে সংগঠিত করেছিল, তাদেরকেও যুবদলে স্থান দেওয়া হয়নি। যুবদলের রাজপথের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়ার কারণে সিলেট বিএনপি পরিবারে এক বিরূপ পরিবেশ তৈরি হয়। এ অবস্থায় সিলেটের চারজন কেন্দ্রীয় নেতা মাঠপর্যায়ের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাপে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে মহাসচিবের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে নেতৃবৃন্দ পদত্যাগ থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হন।

সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখানেও আমরা লক্ষ্য করলাম যারা রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবক দলকে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে তৈরি করেছিল তাদেরকে কমিটি থেকে বাদ দিয়ে বিএনপিতে পদধারী কিছু লোকদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হল। ফলে স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর ও জেলার বেশিরভাগ নেতাকর্মী রাগে ও ক্ষোভে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এ সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আমরা বিএনপি পরিবার অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত।

অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তৎকালীন অনেক নেতা ব্যর্থ হলেও সামসুজ্জামান জামান রাজপথে সেদিন বিজয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়াও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ আন্দোলনসহ সর্বশেষ সরকারবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনসহ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজকে আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে এই বিষয়টি সবার কাছে তুলে ধরলাম। সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপও কামনা করেন বিএনপির প্রবীণ এ নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা সেলিম আহমদ, জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আহমেদুল হক চৌধুরী মিলু, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সুদ্বীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, মহানগর বিএনপির তাঁতীবিষয়ক সম্পাদক ফয়েজ আহমদ দৌলত, সহ-তাঁতীবিষয়ক সম্পাদক শওকত আলী, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন লস্কর, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মিনহাজ উদ্দিন মুসা, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য ও সাবেক জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিকুর রহমান সাদিক, জেলা বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা জাসাসের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আহমদ রানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

তুহিন আহমদ/আরএআর