মরদেহ নিয়ে আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না তাদের
উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে গণকবরস্থানের অভাবে স্বজনদের অনেক টাকা খরচ করে মৃতদেহ নিয়ে যেতে হতো দেশের বাড়িতে। আর যারা হতদরিদ্র, তাদের জন্য বিষয়টা ছিল আরও কষ্টের। মানুষের শেষযাত্রার এই কষ্ট কাছ থেকে অনুধাবন করেছিলেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পগোষ্ঠী ফকির গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ ফকির মনিরুজ্জামান।
তিনি নিজ উদ্যোগে করোনার সময় ২০২০ সালে শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামে ১০০ শতাংশ জমি কিনে গড়ে তুলেছেন একটি গণকবরস্থান। ফলে অসহায়দের শেষ আশ্রয়ের ঠিকানা তৈরি হলো। শিল্পোদ্যোক্তার এমন উদ্যোগে স্থানীয়রাও এখন খুশি।
বিজ্ঞাপন
শিল্প এলাকাসমৃদ্ধ গাজীপুরের শ্রীপুরে লাখো মানুষের বসবাস। এর মধ্যে শিল্প-কারখানার শ্রমিকসহ বিশেষ একটি শ্রেণির সংখ্যাই বেশি। যাদের অধিকাংশই জেলার বাইরের দেশের বিভিন্ন এলাকার। এ ছাড়া রয়েছে ভাসমান-ছিন্নমূল শ্রেণির উল্লেখযোগ্য সংখ্যার মানুষও।
অসহায় এসব মানুষের মৃত্যুর পর প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল কাফন ও দাফনের বিষয়। অবশেষে মৃত মানুষগুলো পেল সর্বশেষ ঠিকানা।
ফকির গ্রুপের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, শিল্পগোষ্ঠী গ্রুপ গাজীপুরের শ্রীপুরের ভাংনাহাটি গ্রামে গ্রিন ভিউ গলফ রিসোর্ট নামের একটি অবকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলে বেশ কয়েক বছর আগে। এই রিসোর্টটি ইতোমধ্যে সেরা রিসোর্ট হিসেবে দেশ-বিদেশে স্থান পেয়েছে। রিসোর্ট-সংলগ্ন এলাকায় গণকবরস্থানের অভাবে সাধারণ লোকজনের প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ফকির মনিরুজ্জামানের দৃষ্টিতে আসায় তিনি ভাংনাহাটি উত্তরপাড়া এলাকায় প্রায় তিন কোটি টাকা দিয়ে ১০০ শতাংশ জমি কিনে তা গণকবরস্থানের জন্য ওয়াকফ করে দেন।
বিজ্ঞাপন
পরে আরও কয়েক কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনন্দন সীমানাপ্রাচীর, মূল ফটক ও মৃতদেহ গোসলের কক্ষ, জানাজার নামাজের স্থান পরিপাটি করে তৈরি করেন। কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করেন এই শিল্প উদ্যোক্তা। অসহায় মানুষের শেষযাত্রার আনুষঙ্গিক দাফনসামগ্রীর খরচও তিনি বহন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজের সূত্রে শ্রীপুরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বসবাস করে। তাদের বেশির ভাগই অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল। অনেকেই টাকার অভাবে মরদেহ এলাকায় নিতে পারেন না। আবার গণকবরের ব্যবস্থা না থাকায় দাফন নিয়ে শোকের মধ্যেও ভোগান্তি হয়ে দাঁড়াত। পরে জেলা সদরে গিয়ে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করতে হতো। ফকির গ্রুপের উদ্যোগে গণকবরের ব্যবস্থা করায় স্বজনদের ভোগান্তি এবার কমেছে।
শ্রীপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় অস্থায়ী মানুষ মারা গেলে স্থানীয় অনেকেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফনে অনিচ্ছা জানাত। পৌরসভার মধ্যে জমি কিনে শিল্পোদ্যোক্তা ফকির মনিরুজ্জামান দৃষ্টিনন্দন গণকবরস্থান তৈরি করে দেওয়ায় অনেক ভোগান্তি দূর হলো। ইতোমধ্যে এখানে কয়েকজনের দাফন হয়েছে। এই কবরস্থান এখন সবার জন্য উন্মুক্ত।
ফকির গ্রুপের কর্মকর্তা (কনস্ট্রাকশন) মো. খোরশেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিল্পোদ্যোক্তা ফকির মনিরুজ্জামানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা কবরস্থান সবার জন্য উন্মুক্ত। অসহায় কেউ মারা গেলে তার শেষযাত্রার যাবতীয় খরচও আমাদের প্রতিষ্ঠান বহন করেন।
তিনি বলেন, কবরস্থানকে কেন্দ্র করে এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (মসজিদ, মাদ্রাসা) গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া এই গ্রুপের পক্ষ থেকে ভাংনাহাটি এলাকায় বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা ও মসজিদ পরিচালনায় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এনএ