দয়া করে কেউ এড়িয়ে যাবেন না। সাহায্য করতে না পারলেও দয়া করে পোস্টটি শেয়ার করুন। যাতে কোনো দানশীল ব্যক্তির নজরে আসে। মাত্র আড়াই লাখ টাকার অভাবে শিশু ইমনের চিকিৎসা করতে পারছে না তার দরিদ্র বাবা। প্রায় ৩ বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে এমন একটি পোস্ট। যা দেখে মন কেঁদেছে অনেকেরই। প্রতারিতও হয়েছেন অনেকেই। আবার প্রতারণা জেনে অনেকে সাহায্য করতে গিয়েও ফিরে এসেছেন।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে শিশু ইমনের চিকিৎসার সহযোগিতার জন্য সংবাদ প্রকাশ হয়। যেখানে শিশুর বাবা হিসেবে মিকাইল নামের এক ব্যক্তির ফোন নম্বরসহ প্রকাশ করা হয়। ঘটনা উদঘাটনের জন্য অনুসন্ধানে নামে ঢাকাপোস্ট। 

প্রকাশিত সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শিশু ইমনের বাবা মিকাইল নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মিকাইলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইমন আমার ছেলে। ইমনের পেটে প্রায় ৫ থেকে ৬ কেজি ওজনের একটি টিউমার হয়েছে। তিনি আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার হামিম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন বলে পরিচয় দেন। মোহাম্মদ মিকাইল হোসেন সাতক্ষীরার দিয়াভাটা থানার ডাউলিয়া গ্রাম থেকে ১১ বছর আগে ঢাকা শহরে আসেন বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, নরসিংহপুরের বাংলাবাজার এলাকার নওশের আলীর বাড়িতে প্রায় ১১ বছর ধরে ভাড়া থাকেন। এরপর তাকে অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।

সন্দেহ হলে তার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী অনুসন্ধানে যায় ঢাকা পোস্ট। ওই এলাকার বাংলাবাজারে গিয়ে মিকাইলের ভাড়াবাড়ির সন্ধান করলে বাড়িওয়ালা নওশের আলীর খোঁজ মেলে। কিন্তু তিনি প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। তাদের তিনটি বাড়িতে খোঁজ নেওয়া হলে জানা যায়, একটি বাড়িতে থাকেন নওশের আলীর ছেলে শমশের সরকার। সেখানে মিকাইলের খোঁজ মেলেনি। পর পর নওশের আলীর ছেলে বরকত আলী সরকার ও তার ভাগনের হাফিজুর রহমানের বাড়িতে খোঁজ নিলে এই নামের কেউ থাকেন না বলে জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন এঘটনা আমাদের এলাকায় থাকলে আমরা অবশ্যই জানতাম। এলাকায় এমন ঘটনা হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হতো। আমরা আজ আপনাদের কাছে শুনলাম। কিন্তু এমন ঘটনা কিংবা এমন রোগী আমাদের এলাকায় নেই। এরা প্রতারক চক্র বলেও অভিহিত করেন তিনি।

মিকাইল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাড়িওয়ালার নামসহ পরিচয় দেন। অন্য ফোন নম্বর দিয়ে ফোন দিলে তিনি সাইফুল জোয়াদ্দারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন বলে জানান। কিন্তু ওই এলাকায় এ নামের বাড়িওয়ালার সন্ধান মেলেনি।

এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে গিয়ে ফিরে আসা সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ম্যান ফর ম্যানের প্রতিষ্ঠাতা রাজিবুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একই ছবি দিয়ে প্রায় দুই বছর আগে একটি সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট দেখতে পাই। আমরা তাকে সহযোগিতা করতে চাই। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছে। ঢাকা মেডিকেলে যোগাযোগ করা হলে এমন কোনো রোগী ভর্তি নেই বলে জানা যায়। পরে অসংখ্যবার ওই মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তিনি আর রিসিভ করেননি। তিনি শুধু বিকাশে টাকা চান। কিন্তু শিশুটিকে দেখে টাকা প্রদানের কথা বললেই আর ফোন রিসিভ করেন না। একই সঙ্গে ছবিটি দিয়ে আমরা আমাদের গ্রুপে পোস্ট দেই। কিন্তু পরক্ষণেই এই ছবি ভারতের বলে অনেকে আমার কাছে স্ক্রিনশট পাঠিয়ে দেন। সেখানে হিন্দি ভাষায় পোস্ট করা ছিল। 

সাভার সিটি সেন্টারের ব্যবসায়ী রনি হক বলেন, একই ছবির পোস্ট দেখে আমরা ৫০ হাজার টাকা দিতে চাই। কিন্তু তার বাসায় কিংবা দেখা করে টাকা দিতে চাইলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। এটা একটা প্রতারক চক্র। এরা অনেক ভালো মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদের আইনের আওতায় আনা উচিত বলেও দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির (আশুলিয়া) সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বলেন, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এখন অসাধু চক্র ব্যবসা শুরু করেছে। মানুষের সহানুভূতিকে পুঁজি করে এ চক্রটি ব্যবসা করে আসছে। মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে ফেসবুক। কাউকে সহযোগিতা করতে হলে অবশ্যই ফেসবুকের পোস্ট দেখে নয়, খোঁজ নিয়ে তাদের সান্নিধ্যে গিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলেই এসব চক্র হারিয়ে যাবে। প্রয়োজন শুধু আমাদের একটু সচেতনতা। 

এমএএস