নাটোরে শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকায় সিআইডি পুলিশে কর্মরত উপ-পরিদর্শক খন্দকার আতিকুর রহমানের স্ত্রী সুমি বেগমকে আটকের পর জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

বুধবার রাতে সুমি বেগমকে আটকের পর বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে আদালতে তোলা হলে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল আদালতের বিচারক এএফএম গোলজার রহমান তাকে জেল হাজতে পাঠানো নির্দেশ দেন।

নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীর নাম শ্যামলী (১২) নাটোর সদর উপজেলার পাইকোরদল গ্রামের মঞ্জিল হোসেনের মেয়ে।

গতকাল বুধবার বিকেলে সুমি বেগম বাবা-মাকে দেখতে গৃহকর্মী শ্যামলীকে সঙ্গে নিয়ে পাইকোরদোল গ্রামে যায়। এ সময় শ্যামলীর শরীরের আঘাতের চিহৃ দেখে আত্মীয়-স্বজনরা জিজ্ঞাসা করলে শিশুটি টানা তিন বছর ধরে চলা নির্যাতনের কথা তুলে ধরে।

এ সময় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী সুমি বেগম এবং শাশুড়ি দিলারা বেগমকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনায় বুধবার রাতেই নাটোর থানায় সুমি বেগমের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী শ্যামলীর মা নার্গিস বেগম ।

নির্যাতনের শিকার শিশু ও তার পরিবার জানায়, অভাবের তাড়নায় দরিদ্র বাবা-মা শিশুটিকে মাসিক এক হাজার দুইশ টাকা বেতনে গৃহকর্মীর কাজে দিতে বাধ্য হয়েছে। শ্যামলী (১২) তিন বছর আগে ঢাকায় সিআইডি পুলিশে কর্মরত উপ-পরিদর্শক খন্দকার আতিকুর রহমানের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেয়।

এরপর থেকে তাকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে আর দেখা করতে দেননি তারা। শুরুতে ৮ মাস নিয়মিত বেতন পাঠিয়ে দিলেই পরে আর বেতন দেননি। কাজে যোগ দেওয়ার এক মাস পর থেকেই নানা বিষয় নিয়ে গৃহকর্ত্রী সুমি শিশু গৃহকর্মী শ্যামলীকে বকাঝকা ও নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে তার শরীরে গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা এবং প্লায়ার্স দিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানের চামড়া তুলে ফেলে। তার মাথা ও হাত-পায়ের আঙ্গুলসহ পুরো শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে।

নির্যাতনের শিকার শিশুটি জানায়, কাজে একটু ভুল করলেই তাকে প্রচুর মারধর করা হতো। জোরে কান্না করলে আরও বেশি মারা হতো। তবে গৃহকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক তাকে মা বলে ডাকতো। নিজের মেয়ের মতো আদর করতেন। আমাকে মারপিট করার জন্য স্ত্রীকে বকাঝকা করতেন ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্যামলীর পরিবার অনেকবার বলার পর বুধবার সুমি বেগম ও তার মা পাইকোরদোল গ্রামে আসে। এ সময় শিশু গৃহকর্মীর শরীরে আঘাতের চিহৃ দেখে গ্রামবাসী তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তারেক জুবায়ের জানান, পুলিশের একটি টিম মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত সুমি বেগম আটক করেছে। ঘটনার তদন্ত করে যা সামনে আসবে সেভাবেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন সবার জন্য সমান। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। 


তাপস কুমার/এমএএস