নোয়াখালীর সুবর্ণচরে শসা চাষে বিপ্লব ঘটছে। অল্প খরচে দাম বেশি পাওয়ায় শসা চাষ করে অনেকেই এখন ভাগ্য বদল করছেন। উপজেলার দেড় হাজার পরিবার এ সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত।

সরেজমিনে নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের চরক্লার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। পানির ওপর মাচায় সবুজের সমারোহ। মাঝে উঁকি দিচ্ছে হলুদ ফুল কিংবা থরে থরে ঝুলছে শসা। সেই মাচার নিচে করা হয়েছে মাছের চাষ। পাশাপাশি বরবটি, কুমড়া, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিও চাষ হয়েছে।

এখানকার  শসা বিষাক্ত সার ও কীটনাশকমুক্ত হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে বেশ। বীজ রোপণের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফল ধরা শুরু হয়। বিঘা প্রতি খরচের চেয়ে লাভ দ্বিগুণ হওয়ায় শসা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চাষি আবদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে এসব জমিতে আমরা ধান চাষ করতাম। কিন্তু ধান চাষ করে লোকসানের মুখে পড়ি। তাই সবাই মিলে শসা চাষের উদ্যোগ নেই। শসা চাষ শুরুর পর আমরা খুব লাভবান হই। এক একর জায়গায় শসা চাষ করে আমরা প্রায় দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা রোজগার করি।

তিনি আরও বলেন, শীতকালে পাড়ে শিম গাছ রোপণ করে আরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা পাই। এ ছাড়াও নিচে মাছ চাষ করি। সব মিলে বছরে এক একর জায়গা থেকে ৩ লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা রোজগার করতে পারি। বর্তমানে আমরা পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে আছি। আমাদের অসুবিধা হলো এখানকার রাস্তা ভালো না। যদি সড়ক ভালো হতো তাহলে আমরা আরও ভালো দাম পেতাম।

একই গ্রামের প্রান্তিক চাষি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেঘনা নদীর পাড়ের এলাকা হওয়ায় জোয়ারের পানি এসে ফসল নষ্ট করে দেয়। তাই সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আমরা বর্তমানে খুব ভালো আছি। তবে সড়কের বেহাল দশার কারণে পণ্য পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন কৃষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বহুমুখী চাষাবাদ করে এই ইউনিয়নের কৃষকরা এখন অনেক ভাল আছেন। এখানে কৃষকদের জমি চাষাবাদে তেমন জ্ঞান নেই। সরকারিভাবে যদি কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে ফলন আরও বাড়বে।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মোস্তফা বাজারের আল্লাহর দান সবজি আড়তের মালিক মো. ছানা উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানকার রাস্তা-ঘাটের বেহালদশা। এ কারণে ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা শসা কিনতে পারছেন না। আবার কিনলেও দাম বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

সুবর্ণচর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুবর্ণচরে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। উন্নত জাতের শসার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে এবার ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে। সমগ্র উপজেলার মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। 

নোয়াখালী জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর নোয়াখালীতে ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। সুবর্ণচরের মাটি ও জমি শসা চাষে উত্তম হওয়ায় প্রতি বছরই উপজেলায় চাষ বাড়ছে। সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে প্রায় সারা বছরই শসা-ক্ষীরা চাষ সম্ভব। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও চাষিদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

এসপি