চাকরি খুঁজছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ। চাকরি জীবনে সবশেষ তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসরের এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর এবার চাকরি চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন মমেক হাসপাতালের সাবেক এ পরিচালক।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত কয়েকটি স্ট্যাটাসে চাকরি খোঁজার কারণও পরিষ্কার করেছেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেছেন, জীবিকার তাগিদে এমন আবেদন নয় বরং নিজেকে কার্যক্ষম রাখতেই আবারও কাজে যোগ দিতে চান তিনি।

গত রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা ৫৬ মিনিটে তিনি এ ব্যাপারে 'নিবেদন' উল্লেখ করে প্রথম স্ট্যাটাসটি দেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন শুভাকাঙ্ক্ষী। আজ ১ বছর ২ মাস ঘরে বসা। এলপিআর শেষ। সংসার ও নিজকে কর্মক্ষম রাখতে কিছু করা প্রয়োজন। নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা করিনি। হালাল ও হারামের সংমিশ্রণে এ জীবন। মেডিকেল ও নন মেডিকেল যে কোনো সেক্টরে কোনো নিবেদিত ও সৎ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান আমাকে বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে চাকরির সুযোগ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।’

এরপর তিনি সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) আরও একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে  ‘সেনাচাকরি-পরবর্তী জীবন’ শিরোনামে তিনি লেখেন, ‘শ্রদ্ধাভাজন প্রাক্তন সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া স্যারের অধীনে ঢাকা সিএমএইচে আধুনিকায়নের কাজে নিবেদিতভাবে কাজ করার পুরস্কার হিসেবে রিটায়ারমেন্টের চারদিন আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ বছর ৮ মাস ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করেছি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। দুইজন ডাক্তারি পড়ুয়া মেয়েকে একা ঢাকা রাখা এবং অসুস্থ মাকে রেখে ময়মনসিংহে একা থাকতে হয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ এবং ক্ষমতাধর মানুষ তাদের ক্ষমতা দেখিয়েছেন। অবসরে আসার পর তারা যেখানেই সিভি দেই সেখানে নেগেটিভ ফিডব্যাক দেয় আমার সম্পর্কে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আল্লাহ সব কিছু দেখছেন। তিনি সব কিছুর হিসাব নেবেন। আমি চাকরিজীবনে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে নানা অসুখে আক্রান্ত হয়েছি। আমি কারো আনুকূল্যে বাঁচতে চাই না। মানুষ হিসেবেই সহযোগিতা চাই। চাকরিজীবনে যেটা দেশের স্বার্থে প্রয়োজন তাই করেছি। পপুলার হতে চাইনি। কর্মীরা কাজ করেন, সংস্থাপ্রধান এর সুফল পান। আমার বাবা দুইবার ৭৫ পর্যন্ত এমপি ছিলেন। সম্মুখে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এমবিবিএস ডাক্তার ছিলেন। চাকরিজীবনে এর কোনো সুবিধা নেননি। সব সরকারের আমলে প্রথমবার পদোন্নতি পেয়েছি। অবসরের পর এলপিআর শেষ হয়ে যাওয়ায় পর সংকটে পড়েছি। বর্তমানে ব্যাংকের লভ্যাংশ ৬%। যারা ব্যাংকে টাকা রাখেন তারা বোঝেন সংকট কী।  আমি ব্যবসা বুঝি না। আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরির নিবেদন করেছি। আল্লাহ চাইলে হবে না চাইলে হবে না।’

‘আমি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হব না। রাজনীতি না করেও এমপি না হয়েও দেশের জন্য কাজ করা যায়। যদিও আমি রাজনীতি সচেতন মানুষ। জাতির পিতার বর্তমান আওয়ামী লীগকে পছন্দ করি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করি। আমি জাতির জনককে শ্রদ্ধা করি ও উনার পরিবারের সবার মাগফিরাতের দোয়া করি।’

অবসরপ্রাপ্ত এ সেনাকর্মকর্তা চাকরি সংক্রান্ত সর্বশেষ স্ট্যাটাস দেন সোমবার রাত ১টা ৫১ মিনিটে। ওই স্ট্যাটাসে মূলত তিনি তার চাকরি খোঁজার স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে করা অনেকের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন।

‘নিবেদন ও আমার বক্তব্য’ শিরোনামে স্ট্যাটাসটিতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ লেখেন, ‘আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী হতাশ হয়েছেন এ পোস্ট দেখে। আমার সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী এটা করা উচিত হয়েছে কি না এটা নিয়ে তাদের ভাবনা।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে কাজ করতে চাওয়া অপরাধ নয়। পেট চালানোর জন্য নয়। নিজকে কার্যক্ষম রাখতে চাওয়া অপরাধ নয়। হেলথ সেক্টরে অনেককেই জানি কেমন মানুষ তারা। যারা আমাকে ভালোবাসেন তারা আমাকে অবশ্যই পরামর্শ দেবেন। আপনাদের দোয়া ও শুভকামনা কাম্য। আমারও ভুল হয়। আমার কাছে যা ঠিক তা অন্যের কাছে নাও হতে পারে। আমি আমার লক্ষ্যকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

উবায়দুল হক/এসকেডি