কারেন্ট জাল ব্যবহার বন্ধে সরকার ও মৎস্য বিভাগ যখন হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখনই দেশের মৎস্যসম্পদকে ধ্বংস করতে জেলেরা পদ্মা নদীতে নির্বিচারে অধিক মাছ শিকারের ক্ষেত্রে চায়না দুয়ারী নামের এক বিশেষ ফাঁদ ব্যবহার করছেন।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই জাল ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশি প্রজাতির মাছ চরম অস্তিত্ব-সংকটে পড়বে। এই ধরনের ক্ষতিকর ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের কোনো আইন না থাকায় মৎস্য বিভাগও নিতে পারছে না কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। তবে মৎস্য আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারা প্রয়োগ করে মৎস্য বিভাগ নিয়মিত নদীতে অভিযান পরিচালনা করছে।

সরেজমিনে রাজবাড়ীর সদর উপজেলার গোদারবাজার, সোনাকান্দর, উড়াকান্দা এলাকায় পদ্মা নদীতে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য ছোট ডিঙিনৌকা নদীর তীরের দিকে নোঙর করে আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, কী কারণে নৌকাগুলো অলস পড়ে আছে। একটু খোঁজ নিতেই জানা গেল, এসব নৌকা মাছের বংশ ধ্বংসকারী ‘চায়না দোয়ারী’ নামের একধরনের ফাঁদ ফেলে বসে আছে।

পদ্মায় থাকা মিঠা পানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সূক্ষ্ম এই ফাঁদে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মাছ ও এই ফাঁদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। এতে ক্রমেই মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল ও ছোট নদীগুলো।

চায়না দুয়ারী সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ৬০ থেকে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ক্ষুদ্র ফাঁশবিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে। লোহার ৪টি রড ও রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে বক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘের দিয়ে তৈরি করা হয়। একেকটি চায়না দুয়ারীর দাম ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। সহজে মাছ ধরা পরে বলে এতে আয় বেশি, অন্যদিকে পরিশ্রম কম।

চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার করা বিমল হালদার নামের এক জেলে বলেন, এই ফাঁদে সব ধরনের মাছই আটকা পড়ে। আগে আমরা কারেন্ট জাল ব্যবহার করতাম কিন্তু মৎস্য বিভাগ নিয়মিত অভিযান চালানোর কারণে কারেন্ট জাল ব্যবহার বাদ দিয়ে এখন চায়না দুয়ারী ব্যবহার করি। এই জালে খরচ কম আয় বেশি।

পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, বিকেল হলেই ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে এই চায়না দুয়ারী নদীতে ফেলা হয়। সারারাত নদীতে রাখার পর সকালে জাল তুলে আনলে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় সব মাছ, নদীতে থাকা জলজ প্রাণী এমনকি ছেঁকে ওঠে মাছের ডিমও। এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়াই কঠিন হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রোকোনুজ্জামান (ভারপ্রাপ্ত) ঢাকা পোস্টকে বলেন, চায়না দুয়ারী ব্যবহারে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে। এই ফাঁদ বন্ধে মৎস্য আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নদীতে এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মীর সামসুজ্জামান/এনএ