কুষ্টিয়ায় হঠাৎ বেড়েছে শিশু রোগী। তাদের কেউ ঠান্ডা, কেউ জ্বর, কেউ নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত। তারা অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছেন কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। সেখানে ২০টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ১২২ শিশু।

শয্যাসংকটের কারণে অধিকাংশ রোগীর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। জনবলসংকট ও অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। 

কুষ্টিয়ায় ঠান্ডা, জ্বর, নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই এ রোগে আক্রান্ত ৩০-৪০টি শিশু ভর্তি হচ্ছে। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে আক্রান্ত রোগীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভিড় বেড়ে গেছে। তাপদাহ আর আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা, নিউমোনিয়া ও জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
 
একদিকে ভ্যাপসা গরম অন্যদিকে দুর্গন্ধময় পরিবেশে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। ধারণক্ষমতার ৬ গুণ অধিক রোগী থাকায় নার্সরাও শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
 

বুধবার দুপুরে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডের প্রবেশ পথে শতশত রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। ওয়ার্ডের ভিতরেও ভিড়। ভিড়ের মধ্যেই চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন শিশু রোগীদের। ২০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ১২০ জন শিশু।

রোগীর ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। গাদাগাদি করে বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। পর্যাপ্ত ওষুধ থাকলেও জনবল ও জায়গার অভাব রয়েছে। এজন্য চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স আফরোজা পারভীন বলেন, হঠাৎ করে এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডা, নিউমোনিয়া ও জ্বরের রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শয্যার চেয়ে ৬ গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। নার্স রয়েছেন ৬ জন। এতো রোগীকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।

শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. এসএম নাজিম উদ্দিন বলেন, হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। আবহাওয়ার পরিবর্তন, বৃষ্টি, গরম ও ঠান্ডার কারণে শিশু রোগীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে চাপ বাড়ছে হাসপাতালে।

সরেজমিনে শিশু ওয়ার্ডের ভেতরে যেতেই চোখে পড়ল মেঝে ও বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে অন্তত ১০০ শিশু রোগী। ওয়ার্ডের ভেতরে কয়েকটি কক্ষ। সব জায়গাই রোগীতে ঠাসা। কোথাও শয্যা খালি নেই। রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই।

এক বছর বয়সী শিশু ইব্রাহিম গত চার দিন ধরে ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকের চিকিৎসায় উন্নতি না হওয়ায় শিশু ইব্রাহিমকে সাথে নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের এসেছেন মা আয়েশা খাতুন। তিনি বলেন, চার দিন ধরে ইব্রাহিমের ঠান্ডা ও জ্বর। ঠিক মতো খাচ্ছে না ছেলে। এজন্য বড় ডাক্তারের কাছে এসেছি।

শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী সাদিয়ার মা স্মৃতি বলেন, কয়েকদিন আগে থেকে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়। ঠান্ডা-জ্বরের জন্য গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু শিশু ওয়ার্ডে শতশত মানুষের ভিড়। ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শয্যাসংকটের কারণে খুব কষ্ট হচ্ছে।

শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বজন মাহাবুব উদ্দিন বলেন, বেড না পাওয়ার জন্য বারান্দায় বিছানা পেতে আমরা চিকিৎসা নিচ্ছি। বেডের ওপর দিয়ে মানুষজন চলাচল করছে। অনেকে হাত-পায়ের ওপর পা ফেলছেন। মানুষের ভিড়ে দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশরাফুল আলম বলেন, রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও নার্স সংকট রয়েছে। এতে রোগীদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। ২০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ১২২ জন রোগী ভর্তি আছে।

রাজু আহমেদ/এমএসআর