সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর দারুত তাক্বওয়া মহিলা কওমি মাদরাসা থেকে গত রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে নিখোঁজ হয় তিন ছাত্রী। এর পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে মনিরা আক্তার, মিম আক্তার ও সূর্য ভানু নামে দ্বিতীয় শ্রেণির ওই তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের  কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের নিখোঁজ এবং উদ্ধারের আদ্যোপান্ত জানানো হয়।
 
জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদরাসার মোহতামিম আসাদুজ্জামানের স্ত্রীর এক হাজার টাকা সম্প্রতি হারিয়ে যায়। মাদরাসার সব শিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় শ্রেণির ওই তিন ছাত্রীকে সন্দেহ করেন। এতে টাকা ফেরত দিতে তাদের চাপ দেওয়া হয়। অন্য সবাই তাদেরকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করায় তারা নিজেদেরকে অসহায় মনে করে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতেই পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ওই ছাত্রীরা।
 
পুলিশ সুপার জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে মাদরাসার একটি কক্ষের জানালা দিয়ে বাইরে বের হয় তারা। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছায় ইসলামপুর রেলস্টেশনে। পরে তিনজনের কাছে থাকা ৩৪০ টাকা দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটে। এরপর ইসলামপুর রেলস্টেশন থেকে সোমবার ভোরে ছাড়া সেই ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছালে তিন ছাত্রী নেমে পড়ে সেখানে।
 
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরও বলেন, বুধবার ইসলামপুর থানা কার্যালয় এলাকার পুলিশ কল্যাণ মার্কেটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। তাতে ওই তিন ছাত্রীকে হেঁটে ইসলামপুর স্টেশনের দিকে যেতে দেখা যায়। এর সূত্র ধরে জামালপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় যায়। পরে কমলাপুর রেলস্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করলে তাতে ওই তিন ছাত্রীকে স্টেশন থেকে বের হতে দেখা যায়। 

পরে পুলিশ সদস্যরা কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের লোকজনকে তিন ছাত্রীর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে রাজা মিয়া নামে এক রিকশাচালক ওই তিন ছাত্রীর খোঁজ দেন। রাজা মিয়ার বাড়িতেই ছিল তারা। সেখান থেকে তাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর শুক্রবার সকালে তাদের ইসলামপুরে ফিরিয়ে আনা হয়।

রিকশাচালক রাজা মিয়ার বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সোমবার দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ওই তিন ছাত্রী তার রিকশাটি ভাড়া করে। কিন্তু কোথায় যাবে, তারা বলতে পারছিল না। পরে তারা জানায় বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। ফলে তাদের তিনি বাসায় নিয়ে যান।

রাজা মিয়া ওই ছাত্রীদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তিন ছাত্রীর মধ্যে দুজনকে একটি পোশাক কারখানায় চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। থাকার জন্য রিকশাচালক একটি ঘরও ভাড়া করে দিয়েছিলেন বলে জানান পুলিশ সুপার। 
 
তিন ছাত্রী উদ্ধার হলেও মুক্তি পাচ্ছেন না চার শিক্ষক

তিন ছাত্রী নিখোঁজের পর মঙ্গলবার সকালে মাদরাসাটির মোহতামিমসহ চার শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনে পুলিশ। এ সময় মাদরাসাটির পাঠদান কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় বুধবার নিখোঁজ মনিরার বাবা মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন। পরে চার শিক্ষককে আদালতে সোপর্দ করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আগামী সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠায় আদালত। 

নিখোঁজ তিন মাদরাসাছাত্রী উদ্ধার হওয়ায় চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবপাচারের মামলার ধারাটি উঠে গেলেও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ থাকায় শিগরিরই তাদের মুক্তি মিলছে না। 

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি তারা। তিন ছাত্রী নিখোঁজের ঘটনার পর মাদরাসাটির বিষয়ে নানা তথ্য আসছে। ফলে মাদরাসাটির অর্থের জোগানদাতা এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হতো কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে।

উবায়দুল হক/আরএআর