আজ ১৮ সেপ্টেম্বর। হবিগঞ্জের কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে একসঙ্গে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাজাকারের সহযোগিতায় ১২৭ জনকে হত্যা করেছিল পাক হানাদর বাহিনী। আহত হয়েছিলেন শতাধিক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় শহীদ কিংবা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ঠাঁই হয়নি তালিকায়। এমনকি নিহতদের স্মরণে সাত বছরেও বধ্যভূমির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

জানা গেছে, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার হাওরবেষ্টিত কৃষ্ণপুর গ্রামটি জেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত। যোগাযোগের তেমন ভালো মাধ্যম নেই। বর্ষায় নৌকা আর শীতকালে হেঁটে চলাচল করতে হয়। গ্রামে শতকরা ৯৫ ভাগ লোকই শিক্ষিত এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীর।

১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনী মহালয়ার দিন আক্রমণ করে। এ সময় গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ স্থানীয় একটি পুকুরে ডুব দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। হানাদাররা দুই শতাধিক গ্রামবাসীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে ১২৭  জনকে হত্যা করে। আজও সে স্মৃতি ভুলতে পারেননি গ্রামবাসী। একসঙ্গে এত লাশের সৎকার করতে না পেরে স্থানীয় নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

প্রতি বছর এ দিনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা নিজ উদ্যোগে নির্মিত বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে দিনটি পালন করে থাকেন। তবে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বধ্যভূমির কাজ তারা নিজেরাই সম্পন্ন করছেন। নিহত ১২৭ জনের মধ্যে পরিচয় পাওয়া ৪৫ জনের নামে একটি স্মৃতিস্বম্ভ নির্মাণ করেছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও নিহত ৪৫ শহীদের নাম তালিকায় স্থান পায়নি।

সারাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর হরিদাশ রায় নামে এক ব্যক্তি ওই গণহত্যার বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০১৭ সালে কুখ্যাত রাজাকার লিয়াকত আলীসহ বেশ কয়েকজনের ফাঁসির রায় হয়। এদের মধ্যে কয়েকজন কারাগারে ও লিয়াকত আলী বিদেশে পলাতক রয়েছেন। 

ওই গ্রামের বাসিন্দা হরে কৃষ্ণ জানান, ১২৭ জনকে আজও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তরুণ প্রজন্মের একটাই চাওয়া, তাদের যেন মরণোত্তর স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাহলে তাদের আত্মার শান্তি পাবে।

কলেজছাত্র কিশোর দাশ জানান, সরকারিভাবে দিবসটি পালন করা হলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস সম্পর্কে জানতে পারবে।

একই গ্রামের বাসিন্দা হিরেন্দ্র দাশ জানান, পাক হানাদাররা আমাদের গ্রামের নিরীহ মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাদরে নাম আজও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় উঠেনি। এত লাশ একসঙ্গে সৎকার না করতে পেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কথাগুলো মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির জানান, পরিচয় পাওয়া ৪৫ জনের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তোলার বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে। 

এসপি