শফিকুল ইসলাম

বলেশ্বর নদীতে বেহুন্দি জাল দিয়ে অবৈধভাবে মাছ ধরার প্রতিবাদ জানানোর কারণে এলাকা ছাড়া হয়েছেন এক ঠিকাদার। জেলেদের কাছ থেকে অবৈধভাবে সুবিধা নেওয়া পুলিশের র্সোস ইউপি সদস্যের সঙ্গে মিলে থানার ওসি তাকে একের পর এক মামলায় জড়াচ্ছেন। এর প্রতিকার চেয়ে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম।

ঘটনাটি ঘটেছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী ইউনিয়নের তুষখালী গ্রামে।

সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম বলেন, তুষখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য  ছগির হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন সংলগ্ন বলেশ্বর নদীতে জেলেদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে অবৈধ বেহুন্দি জাল ফেলতে দিচ্ছেন। ছগির মেম্বার মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বাদলের সোর্স হিসেবে এলাকায় কাজ করেন। ছগির মেম্বারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তুষখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে শামীম হাওলাদার।

ছগির মেম্বারের নেতৃত্বে অবৈধ বেহুন্দি জাল পেতে মাছের পোনা ধ্বংসের প্রতিবাদ জানিয়ে আমার নেতেৃত্বে এলাকায় মানববন্ধন করা হয়। সেই থেকে আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছগির মেম্বার ও চেয়ারম্যানের ছেলে শামীম।

শফিকুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় পুলিশ আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে ওসি নুরুল ইসলাম বাদল আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তবে ওসিকে ৬ হাজার এবং আটককারী এসআই পলাশ চন্দ্র রায়কে তিন হাজার টাকা ঘুষ দেই। এদিকে আটক অবস্থায় ওসির কক্ষে বসেই ছগির মেম্বার ও চেয়ারম্যানের ছেলে শামীম আমাকে মারধর করেন। ওসি কোনো প্রতিবাদ করেননি। বরং মারামারির মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন।

শফিকুল ইসলাম জানান, ছগির মেম্বারের বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া থানায় ৪টি মামলা রয়েছে। এছাড়া পিরোজপুর সদর থানায়, রাজধানীর মতিঝিলে বিস্ফোরক আইনে একটি করে মামলা রয়েছে। অন্যদিকে তুষখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদার ২০০৭ সালে সুন্দরবন উপকূলে ৫ কোটি টাকার ভারতীয় শাড়িসহ কোস্টগার্ডের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি একজন আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি।

ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম নিজেকে এলজিইিডির ঠিকাদার উল্লেখ করে বলেন, আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি এবং অপরাধ চক্রের হোতা ছগির মেম্বারের কাছ থেকে অবৈধ ফায়দা হাসিল করতে আমার বিরুদ্ধে ওসি একের পর এক মামলা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, আইজিপি, রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছি। 

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বাদল। তিনি বলেন, শফিকুল ইসলামের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। তিনি আমার থানার একটি নিয়মিত মামলার আসামি। তার সঙ্গে ছগির মেম্বারের বিরোধ চলছিল। স্থানীয় এমপি ডা. রুস্তুম আলী ফরাজীর স্ত্রী আমাকে শফিকুল এবং মেম্বারকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন। আমি দুজনকে নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু বিরোধ কমেনি। তাছাড়া শফিকুল ইসলামকে যেদিন আটক করা হয় সেদিন থানায় ছগির মেম্বারের সঙ্গে শফিকুলের কথা কাটাকাটি হয়। ছগির মেম্বার উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। আমি দুজনকে থামিয়ে দেই। তখন থেকে শফিকুল ইসলাম ভেবেছে আমি হয়তো ছগির মেম্বারের পক্ষে কাজ করছি। এজন্য সে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিচ্ছে এবং সংবাদ সম্মেলন করছে। শফিকুলের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এদিকে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ছগির হোসেনের মোবাইলে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। 

প্রসঙ্গত, ওসির হয়রানির প্রতিকার চেয়ে গত ১৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপি বরাবর ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন শফিকুল ইসলাম।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর