বরিশালের গৌরনদী থেকে অপহরণের ৯ বছর পর রাসেল মৃধা (২৩) নামে যুবককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন বরিশালের সহকারী পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) আব্দুর রব হাওলাদার। 

তিনি জানান, অপহৃত যুবককে উদ্ধারের পর মামলার নতুন মোড় নিচ্ছে। আদালতে তার দেওয়া জবানবন্দির ওপর মামলাটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। যদি তিনি আদালতে স্বীকার করেন যে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল তাহলে মামলায় দেওয়া চার্জশিট ঠিক থাকবে। আর যদি জানান নিজে আত্মগোপনে ছিলেন তাহলে ঘটনা আবারও তদন্ত হবে। একই সঙ্গে কীভাবে তদন্ত কর্মকর্তা এমন চার্জশিট দিলেন তাও বেরিয়ে আসবে। 

আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, উদ্ধার হওয়া যুবক বর্তমানে পুলিশের জিম্মায় রয়েছে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতে তোলা হবে।

জানা গেছে, উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামের জালাল মৃধার স্ত্রী ফাহিমা বেগম ২০১২ সালের ১৪ মে গৌরনদী মডেল থানায় তার ছেলে রাসেল মৃধাকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলায় একই গ্রামের প্রতিবেশী এস রহমান মৃধা (৫৫), তার ছেলে আরমান মৃধা (২৬), ছোট ছেলে রায়হান (২৩), স্থানীয় শাহীন মল্লিক (৩০), হক ভূইয়া (৭০) ও তার ছেলে মোমিন ভুঁইয়াসহ (২৮) ১৩ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গৌরনদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফোরকান হোসেন বলেন, মামলাটি চারজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। আমার আগে তিনজন তদন্ত করেছেন। আমি ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেই। তদন্তে রাসেল মৃধাকে অপহরণের প্রমাণ পাই। তবে আমরা তাকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হই।

তিনি আরও বলেন, আমার তদন্তে উঠে এসেছে রাসেলকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে হত্যা করার কোনো তথ্য চার্জশিটে উল্লেখ করিনি। এখন ফিরে আসায় আমার কিছু বলার নেই। তবে সে অপহরণ হয়েছিল। 

এসআই ফোরকান বলেন, পুলিশ কখনো মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন না। তদন্তকালে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তাতে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

মামলার আসামি মোমিন ভূঁইয়া বলেন, অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মূলত মামলার বাদী আমাদের প্রতিবেশী। স্থানীয় এক বিধবা নারীকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো বাদী ফাহিমা বেগমের স্বামী জালাল মৃধা। আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম বিধায় আমাদের দমন করতে তার ছেলেকে লুকিয়ে রেখে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দেন। পুলিশ মামলার তদন্ত না করেই  রাসেলকে অপহরণের পর হত্যা বা বিদেশে পাচার করতে পারি বলে চার্জশিট দিয়ে দেন। এতে আমরা ১৩ জনের পরিবার নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছি।

মোমিন বলেন, আমিসহ পাঁচজন আসামি এই মিথ্যা মামলায় কারাগারে থেকেছি। আটজন পলাতক। শেষে খবর পাই রাসেল ঢাকার যাত্রাবাড়িতে একটি বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছে। বিষয়টি গৌরনদী থানা পুলিশকে জানিয়ে আমরা সেখানে গিয়ে রাসেলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করি।

তিনি বলেন, জালাল মৃধার প্রতিবন্ধী এক মেয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। সেই ঘটনায়ও তিনি আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তাছাড়া আমার ছোট ভাইকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল তারা। আমরা তাদের বিরুদ্ধেও একটি অপহরণ চেষ্টা মামলা করেছি।

কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হওয়া এস রহমান মৃধা ও রায়হান মৃধা বলেন, আমাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলায় ৯ বছরে আমরা ১৩টি পরিবার সহায়-সম্বল সব হারিয়েছি। পুলিশ যদি সঠিকভাবে তদন্ত করতো তাহলে আমাদের এত হয়রানির শিকার হতে হতো না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর