পাহাড়, নদী আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বড়গোপ টিলা। সবুজে মোড়া উঁচু টিলার এক পাশে পাহাড়, অন্য পাশে স্বচ্ছ জলের জাদুকাটা নদী। টিলার ওপর দাঁড়ালে হাতছানি দেয় মেঘ-পাহাড়। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যের মেলবন্ধন দেখতে বড়গোপ টিলায় ছুটে আসেন পর্যটকরা। তবে সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি দেখে চোখ জুড়ানোর পরিবর্তে শঙ্কা আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর তাহিরপুরে এসে বড়গোপ টিলাকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার ঘোষণা দেন। ২০১৩ সালে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বারেক টিলায় ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ২০ জুন মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বড়গোপ টিলার ৫০ শতক জমিতে ‘আমব্রেলা প্রকল্প’ স্থাপনের কথা বলেছে। কিন্তু এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি। টিলায় মোট ৩১২ একর জমি আছে। এখানে দীর্ঘ দিন ধরে কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার বাস করে আসছে। টিলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও উপাসনালয় (গির্জা) রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বড়গোপ টিলার পূর্বে যাদুকাটা নদী। উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। পশ্চিমে কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গ্রাম। গ্রামের পরে টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প, তার দক্ষিণে টাঙ্গুয়ার হাওর। সব মিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এলাকাটি।

টিলার ওপর নতুন করে বেশ কিছু ঘর-বাড়ি হয়েছে। টিলার মাঝখান দিয়ে একটি ছোট রাস্তা গেছে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে। এই পথ দিয়েই টাঙ্গুয়ার হাওর, টেকেরঘাট শহীদ সিরাজ লেক ও বড়ছড়া-চারাগাঁও শুল্ক স্টেশনে যাতায়াত করতে হয়। টিলার আঁকাবাকা সড়কটি ভেঙে চলার অনুপযোগী হয়েছে অনেক আগেই। এখন কংকিটের ভাঙা সড়কটি এবড়োথেবড়ো হয়ে আছে।

টিলার ওপরের সড়ক দিয়ে যাওয়া মোটরসাইকেল চালকদের একটু অসাবধানতায় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক চালক টিলার নিচের সড়ক ব্যবহার করেন। তবে দুর্ভোগ মাড়িয়ে জাদুকাটা ও মেঘালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণ পিপাসুদের বড়গোপ টিলার ওপরে যেতেই হয়।
 
স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর মারাক বলেন, বড়গোপ টিলার ওপরে এনজিওর রাস্তা ছিল। পরে এলজিইডি’র মাধ্যমে এটিকে উন্নত করা হয়। আজ সে রাস্তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অথচ এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন দুর্ভোগ সহ্য করে স্থানীয়রাসহ প্রচুর পর্যটক চলাচল করে। এই দুর্ভোগ থেকে উত্তোরণের জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানাই। 

ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী কালাচাঁন বলেন, বড়গোপের রাস্তাটি অনেক দিনের পুরোনো। এখন রাস্তাটির বেহাল অবস্থা হয়ে আছে। একটি মাত্র রাস্তা হওয়ায় পর্যটকরা এদিক দিয়ে চলাচল করে। তাই এটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি।

ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছেন মো. রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, আমরা শহীদ সিরাজ লেক থেকে ঘুরে জাদুকাটা ও মেঘালয়ের সৌন্দর্য দেখতে বড়গোপ টিলায় এসেছি। প্রতি বছরই আমরা এখানে আসি। আসার পরে একটা সমস্যার মুখোমুখি হই। সড়কের বেহাল দশার কারণে বাইকাররা অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। আমার এক বন্ধু কিছু দিন আগে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। মানসিক প্রশান্তির জন্য এসে দুর্ঘটনার শিকার হলে, তার মতো দুঃখজনক আর কিছু নেই। আমরা যারা প্রকৃতি ভালোবাসি তাদের জন্য এই সড়টি মেরামত করা হলে ভালো হতো। 

সুনামগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক মো. রাজা বলেন, বড়গোপ টিলা পর্যটন এলাকা হিসেবে নির্বাচিত হলেও রাস্তাঘাট ভাঙার জন্য সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। আমরা যারা পরিবার, বাচ্চাকাচ্চা সঙ্গে নিয়ে আসি তাদের অনেক কষ্ট হয়।

মোটরসাইকেল চালক মো. আনারুল হক বলেন, পর্যটকদের পাশাপাশি এই এলাকার মানুষদের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার কিছু মানুষ এদিকে চলাচল করে। আমরাও এদিকে যাত্রীদের নিয়ে আসি। অনেক সময় ভাঙা রাস্তার জন্য দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্দা চৌধুরী বাবুল বলেন, বড়গোপ টিলার উন্নয়নমূলক কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী এই সড়কের জন্য ডিও দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী এটাকে ঠিক করবার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী, খুব দ্রুত সড়কের কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে কাজটি শুরু হবে। 

পর্যটকদের সুবিধার জন্য এই রাস্তাটি জরুরি উল্লেখ করে সুনামগঞ্জ জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই সড়কটি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা উড়াল সেতু নামে একটি প্রকল্পের আওতাধীন রয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

এসপি