সিনহা হত্যা মামলা
সার্জেন্ট আয়ুবকে জেরা করতে অপারগতা রানা দাশ গুপ্তের
আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার নির্ধারিত তৃতীয় ধাপে তিন দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। শেষ দিনে সাক্ষ্য দিয়েছেন সার্জেন্ট আয়ুব আলী, ডা. শাহীন আব্দুর রহমান ও ইমাম সালেহ আহমেদ।
দুইজনকে জেরা করলেও সার্জেন্ট আয়ুব আলীকে অপারগতা প্রকাশ করে জেরা করেননি ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত। একই সঙ্গে সিনহা হত্যার পর দুইটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের আবেদন করেছেন তিনি। আদালত বিষয়টি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাঈলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয়েছে বিকেল ৫টায়।
রামু সেনানিবাসের সিকিউরিটি ইউনিটের সার্জেন্ট আয়ুব আলী তার জবানবন্দি দেওয়ার পর ১৫ আসামির মধ্যে বাকি আইনজীবীরা জেরা করলেও ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত তাকে জেরা করেনি। পরে তিনি সে সময়ে দেওয়া দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন উপস্থাপনের আবেদন করেন।
বিজ্ঞাপন
আদালত চত্বরে ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, যাদের সাক্ষ্য দিতে আনা হচ্ছে তারা বিশেষ মহলের মাধ্যমে প্রভাবিত। যার ফলে মামলার মূল নথির সঙ্গে মিল থাকছে না সাক্ষীদের বক্তব্যের।
কী কারণে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের আবেদন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে দুইটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কথা আমরা বলেছি, সেখানে স্পষ্ট আছে যে সার্জেন্ট আয়ুব আলী তখন কী ভূমিকা রেখেছিল। সে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা গেলে আমরা তাকে জেরা করব।
তবে, তার আবেদনটি আদালত সরাসরি খারিজ করেছেন বলে জানিয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, সরকারের যে দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন উপস্থাপনের আবেদন করা হয়েছে তা মূলত সরকারি নথি। যেহেতু সেগুলো জুডিশিয়ালি কিছু নয়। তাই বিচারক তা সরাসরি খারিজ করেছেন।
সিনহা হত্যা মামলায় তিন ধাপে সাক্ষী দিয়েছেন ১৪ জন। যাদের ধারাবাহিকভাবে জেরাও করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর ধার্য্য করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য এসআই শাহজাহান, কনস্টেবল রাজিব ও আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মুহিববুল্লাহ মুহিব/এমএসআর