মায়া রাণী ঘোষ

রাজশাহীতে ভাড়াটিয়া খুঁজে দেওয়ার অজুহাতে বাসায় ঢুকে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মায়া রাণী ঘোষকে (৬৮) হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মিলন শেখ (৪০)  নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি ওই শিক্ষিকার প্রাক্তন ছাত্র। 

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে নগরীর কুমারপাড়া মুন্নুজান স্কুলের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ।

মিলন শেখ নগরীর বড়কুঠি ক্যাম্প এলাকার কালু শেখের ছেলে। পেশায় রংমিস্ত্রি মিলন শেখের বাড়ি থেকে ওই শিক্ষিকার মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত মায়া রাণী ঘোষ নগরীর মুন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি অবসরে যান।  নিঃসন্তান ওই শিক্ষিকার পুতুল ঘোষ নামে এক পালিত কন্যা রয়েছে। বিয়ের পর পুতুল একই এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। একাই বসবাস করতেন মায়া রাণী ঘোষ। তবে প্রতিদিন এসে মায়ের জন্য রান্নাবান্না করে দিয়ে যান পুতুল। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে এসে তিনি মায়ের মরদেহ দেখতে পান।  

গ্রেফতার মিলন শেখ

পুলিশ বলছে, প্রাক্তন ছাত্র হওয়ায় প্রায়ই শিক্ষিকার বাসায় যাতায়াত ছিল মিলনের। সম্প্রতি বাসার ভাড়াটিয়া পেতে তার সাহায্য চেয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে মিলন ওই শিক্ষিকার বাসা গিয়েছিলেন। শিক্ষিকাকে তিনি জানিয়েছিলেন, মাসিক সাড়ে ৫ হাজার টাকায় তার বাসা ভাড়া নিতে চান তিন মেয়ে। বিষয়টি শিক্ষিকা ফোনে স্বজনদের জানিয়েছিলেন। এরপরই খুন হন তিনি।

এ ঘটনায় বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল ব্রিফিং করেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মজিদ আলী। এ সময় বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনার সাজিদ হোসেন ও বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ উপস্থিত ছিলেন।

অতিরিক্ত কমিশনার মজিদ আলী বলেন, নিঃসন্তান ওই শিক্ষিকা বাসায় একা থাকতেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর বাসা ভাড়া নেওয়ার অজুহাতে সেখানে যান মিলন। ফাঁকা বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে ওই শিক্ষিকার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যান। যার আনুমানিক মূল্য ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমরা সন্দেহভাজন হিসেবে মিলন শেখকে আটক করি। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। মিলন জানান, পেছন থেকে আক্রমণ করে ওই শিক্ষিকাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। চুরির উদ্দেশ্যেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। 

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর কুমারপাড়া ঘোষপাড়া মহল্লার নিজ বাসা থেকে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মায়া রাণী ঘোষের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিনই বোয়ালিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই দেবাশিষ ঘোষ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করল পুলিশ। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর