সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের কৃষক মোহাম্মদ আবদুর রহমান দুই দশক প্রবাসে দরজির কাজ করে দেশে থাকা পরিবারের খরচ জুগিয়েছেন। একসময় আয় কমে আসে। শুরু হয় দেশে ফেরার চিন্তা। একদিন ইউটিউবে পিরোজপুরের এক মাল্টাচাষির প্রতিবেদন চোখে পড়ে তার। তার সফলতা দেখে সিদ্ধান্ত নেন মাল্টা চাষের। তারপর দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এসে করেন ‘গ্রিন মাল্টা’র বাগান।

এরপর থেকে আর ভাবতে হয়নি তাকে। কৃষি অফিস থেকে সব সময় পরামর্শ পেয়েছেন। কখন কী লাগবে, তা বলে দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। রোপণের দুই বছর পর জমিতে ফল আসছে। এতে তিনি খুবই সন্তুষ্ট। এখন তিনি বাগানটি যাতে আরও বড় করতে পারেন, সে চেষ্টায় আছেন।

সরেজমিনে গেলে আবদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ২০ বছর আমি প্রবাসে ছিলাম। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারিতে আমি দেশে চলে আসি। আসার পর চিন্তা করি বেকারত্ব দূর করার জন্য কিছু করা দরকার। মাল্টা চাষের প্রতি আমার প্রথম থেকেই দুর্বলতা ছিল। একদিন আমি বিশ্বম্ভরপুর কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি। মাল্টা চাষের বিষয়ে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিলাম। তারা বললেন, আমাদের কাছে মাল্টার চারা আছে। আপনি চাইলে আমরা প্রর্দশনী হিসেবে আপনাকে মাল্টার চারা দেব। এটা শুনে আমার খুব আনন্দ লাগল। আগের সিদ্ধান্তমতো আমি কাজ শুরু করে দিলাম।

পরে ২০১৯ সালের জুনে মাল্টার চারা পেয়ে জমিতে রোপণ করি। প্রথম বছর গাছে ছোট ছোট ফল আসে। এরপর তিনি প্রায় দুই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। তবে এবার বিক্রি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন রহমান। অন্যান্য ফল চাষ থেকে মাল্টায় লাভ বেশি। প্রতিটা গ্রামে এ রকম মাল্টা চাষ হলে বিদেশ থেকে এ ফল আর আমদানি করা লাগবে না। এতে সরকারেরও অনেক টাকা বাঁচবে বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, চিনাকান্দি গ্রামটি ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। এই এলাকার জমি এমনিতেই তুলনামূলক উঁচু। ৫০ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে আরও উঁচু করে তাতেই মাল্টার বাগান করেন রহমান। চারদিকে দেওয়া হয় নিরাপত্তাবেষ্টনী। সেখানে পানি জমে থাকে না। সারা দিনই রোদ থাকে। ছোট ছোট গাছে থোকা থোকা মাল্টা ঝুলে আছে। গাছে গাছে মাল্টা দেখে খুশি প্রতিবেশী-গ্রামবাসীরাও।

বাগান পরিচর্যার জন্য সার্বক্ষণিক এক কর্মী আছেন। এ ছাড়া রহমান নিজেও কাজ করেন। পাশাপাশি অস্থায়ী আছেন আরও দুজন কর্মী। বাগানের স্থায়ী কর্মী জসিম উদ্দিন (৫০) জানান, তিনি শুরু থেকেই এই বাগানে কর্মরত আছেন। কাজ না পেয়ে একসময় বেকার ছিলেন তিনি। এখন রহমান মাল্টার বাগান করায় সেখানে তার কর্মসংস্থান হয়েছে।

বাগানেই কথা হয় গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের (২৫) সঙ্গে। তিনিও একটি মাল্টার বাগান করার চিন্তা করছেন। সিরাজুল বলেন, আব্দুর রহমান ভাইয়ের বাগান দেখেই মূলত উৎসাহ পেয়েছি। এই বাগানের পাশে আমারও জমি আছে। সে জমিতে মাল্টা বাগান করার চিন্তা করছি আমি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, আবদুর রহমান একজন পরিশ্রমী মানুষ। তিনি শুরু থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। যে কারণে এখন তিনি সুফল পেতে শুরু করেছেন। অন্যরাও তাকে দেখে উৎসাহ পাচ্ছেন।

এনএ