টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে এক পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে তিনজন প্রতিবন্ধী। এ নিয়ে মাল্টিমিডিয়া অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট.কমে ভিডিওসহ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দুজনের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলার বীরবাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছোরহাব আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই প্রতিবন্ধী পরিবারকে চাল দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী ভাতার আওতার বাইরে ছিল। সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে উপজেলা সমাজসেবার মাধ্যমে দীনেশ সূত্রধরের মেয়ে ও তার স্ত্রীর নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৃদ্ধ দীনেশ যেন বয়স্ক ভাতা পায় এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিবন্ধী ওই তিন সদস্যদের মধ্যে দীনেশ সূত্রধরের স্ত্রী পারুল সূত্রধর ও মেয়ে দীপা সূত্রধরের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দীনেশ সূত্রধরের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, তারা এলাকায় আগে ছিলেন না। তাদের ভোটার আইডি কার্ডে ঠিকানা টাঙ্গাইলের করোটিয়া। তাই কালিহাতীতে তাদের ভাতার কার্ড দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আইডি কার্ড সংশোধনের কথা বলা হয়েছিল তাদের। তাই তাদের সরকারি ভাতা পেতে দেরি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা তানজিন অন্তরা বলেন, তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দীনেশ সূত্রধর যদি ভূমিহীন হয় তাহলে তাকে জায়গাসহ সরকারি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এ জন্য তাকে ভূমিহীন হিসেবে একটি আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন পেলে তদন্তপূর্বক তাকে ঘর করে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এইচএসসি পাস করা কাঠমিস্ত্রি দীনেশ সূত্রধর ১৯৭৪ সালে বিয়ে করেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া এলাকার সুবল সূত্রধরের মেয়ে পারুল সূত্রধরকে। পরবর্তী সময়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে দীনেশ করোটিয়ায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। তার অধীনে বেশ কয়েকজন কাঠমিস্ত্রি কাজ করতেন। সংসারও বেশ ভালোভাবেই চলছিল। তাদের দুই ছেলে হওয়ার পর দীনেশের স্ত্রীর টাইফয়েড দেখা দেয়। এতে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

এরপর সাত বছর বয়সে বড় ছেলে দীজেন সূত্রধর নেশায় আসক্ত হয় পড়েন। এক সময় ভারসাম্য হারান। পরে তাকে লোহার শিকলে বেঁধে রাখা হয়। এক দিন শিকল ভেঙে পালিয়ে যান। আজ পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাননি পরিবার। এরপর ২০০২ সালে জন্ম হয় দীপা সূত্রধরের। দীপা যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে, তখন তার টাইফয়েড জ্বর হয়। এরপর থেকে দীপা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তবে পাঁচ বছর ধরে দীপাও শিকলবন্দি অবস্থায় আছেন।

২০১৬ সালে দীনেশ সূত্রধর নিজ এলাকা কালিহাতীর বীরবাসিন্দার কস্তুরীপাড়া চলে আসেন। এখানে আসার পরই দীনেশের আরেক ছেলে দীপন সূত্রধর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তাকেও শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছিল দীর্ঘ দিন। তবে স্থানীয়দের সাহায্য-সহযোগিতায় দীপনের চিকিৎসা করানো হলে বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ আছেন।

অভিজিৎ ঘোষ/এসপি