চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় শুক্রবার (০১ অক্টোবর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন শিশু-বৃদ্ধসহ আরও চারজন। এছাড়াও ৩৯ জন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দশরশিয়া-লক্ষ্মীপুর চরের কাছে মাঝ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। বোগলাউড়ি ঘাট থেকে ৪৭ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি দশরশিয়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। 

নিখোঁজ চারজনের খোঁজে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, সুলতানগঞ্জ, চারঘাট ও টি-বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে নৌকা নিয়ে উদ্বার কাজ পরিচালনা করছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। নৌকাডুবিতে নিখোঁজ চারজন হলেন- শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের সাজ্জাদ আলীর ছেলে খাইরুল ইসলাম, জংলাপাড়া গ্রামের আমিন আলীর মেয়ে মোসা. আমেনা খাতুন, তার ভাই মাসুম আলী ও দশরশিয়া গ্রামের হারুন আলীর মেয়ে বৃষ্টি খাতুন। 

এদিকে শুক্রবার (০১ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জে পদ্মা নদী থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ডেইজি বেগম শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দশরশিয়া গ্রামের হারুন আলীর স্ত্রী। শুক্রবার বিকেল ৪টায় তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। 

নিহতরা হলেন- পাকা ইউনিয়নের বিশরশিয়া গ্রামের খাইরুল ইসলামের স্ত্রী নিলুফা বেগম (৫০), নিহতের নাতনি ও সদর উপজেলার নারায়ণপুরের বাবু আলীর মেয়ে মাইশা খাতুন (৮), ছেলে আসমাউল (৭) ও দশরশিয়া গ্রামের হারুন আলীর স্ত্রী ডেইজি বেগম। এদের মধ্যে নিলুফা বেগম ও মাইশা সম্পর্কে নানি-নাতনি এবং আসমাউল-মাইশা সম্পর্কে ভাইবোন।

মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগ পাকা ইউনিয়ন শাখার সভাপতি ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা এসএম আলামিন জুয়েল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনও চারজন নিখোঁজ রয়েছে। তাদেরকে উদ্ধারে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এখন আর কোনো কাজ করছে না। তাই নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা মরদেহ উদ্ধারে পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন। নৌকাতে করে নিহত স্বজনের মরদেহ খুঁজতে নদীতেই দিনরাত এপার থেকে ওপারে ছুটে বেড়াচ্ছেন। 

তিনি আরও বলেন, ফারাক্কা বাঁধের কিছু দূরেই নদীর মাঝখানে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে নদীতে প্রচণ্ড স্রোত বইছে। তাই স্থানীয়রা নিখোঁজ  চারজন মারা গেছেন বলেই ধারণা করছে। তবে তাদের স্বজনরা শুধুমাত্র মরদেহটা উদ্বারে নদীতে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। ঘটনার দুইদিন পর আজকে (শুক্রবার) দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জে একটি মরদেহ পাওয়া গেছে। এ থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহগুলো ভেসে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। তাই পদ্মা নদীতে রাজশাহীর বিভিন্ন পয়েন্টে আমরা মরদেহের খোঁজে অবস্থান করছি। 

দুইদিন ধরে উদ্বার অভিযানে অংশ নিয়েছেন মোশাররফ হোসেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, নদীর মাঝখানে নৌকাডুবি হয়েছে। তীব্র স্রোতে এতে কেউই বেঁচে থাকার কথা নয়। কিন্তু হাটের বিভিন্ন পণ্যের বস্তা ধরেই বেশিরভাগ মানুষ কিনারার বেঁচে ফিরতে পেরেছে। বাকি চারজনকে জীবিত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই তাদের মরদেহের খোঁজ করতেই আমরা এখন রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পদ্মা ও মহানন্দার মিলনস্থলে অবস্থান করছি।

পাকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, নিহত চারজনকেই দাফন করা হয়েছে। যেহেতু আজকেও মরদেহ পাওয়া গেছে, তাই আমরা বাকি চারজনের মরদেহ খোঁজা করা বন্ধ করেনি। মরদেহগুলো ভেসে অনেকদূর চলে যেতে পারে, তাই রাজশাহী শহর পর্যন্ত আমাদের লোক পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে নৌকা নিয়ে মরদেহের খোঁজ করছে। দুইটি মরদেহই গোদাগাড়ীতে পাওয়া গেছে। 

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিস বর্তমানে উদ্ধার অভিযানে নেই। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও নিখোঁজদের স্বজনরা পদ্মা নদীর বিভিন্ন জায়গায় মরদেহের খোঁজে নৌকা নিয়ে ঘুরছেন। মোট ৪৭ জন যাত্রীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর