সুতি নদের ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে এভাবেই পার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী সুতি নদের ওপর স্থাপিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে তিনটি উপজেলার মানুষ। নদের আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষকে প্রতিদিন জীবন-জীবিকার তাগিদে এ সাঁকো ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে।

স্কুল খোলা থাকতে প্রতিদিনই ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করেছি। এখন স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়াশোনার তাগিদে সাঁকো পারাপার হতেই হচ্ছে। এটি অনেকটা নড়বড়ে হওয়ায় কখন যে ভেঙে পড়ে, বলা যায় না। এর ওপর দিয়ে যেতে আমাদের ভয় লাগে

মারুফ হাসান, স্থানীয় শিক্ষার্থী

সাঁকোর বদলে ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে এলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেতু নির্মাণের জন্য জোরালো দাবি জানান তারা।

এই সাঁকো দিয়ে নারী ও শিশুরাও ভয়ে ভয়ে পার হয়

এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, ময়মনসিংহের নান্দাইল ও কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সংযোগস্থলে সুতি নদের ওপর ওই বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করে চলাচল করে আসছে লোকজন। প্রতিদিন শত শত যাত্রী, সাইকেল, মোটরসাইকেল ও রিকশা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ নদের ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের তিনটি জেলার তিনটি উপজেলার হাজারো কৃষক সহজেই তাদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহন করে বাজারজাত করতে পারবেন। এতে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে বলে জানান তারা।

কেন্দুয়া উপজেলার কৃষক আবুল কাশেম বলেন, এই সুতি নদ আগে আমরা সাঁতরে পার হতাম। জমির ফসল ঘরে তুলতেও খুব কষ্ট হয়। এরপর টাকার বিনিময়ে খেয়ানৌকা দিয়ে নদ পারাপার করেছি। এ অবস্থায় দুই বছর আগে আমাদের কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এখানে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেন। তবে বর্তমানে বাঁশের সাঁকোটিও নড়বড়ে হয়ে গেছে। পার হতে গেলে ভয় লাগে। তাই এখানে একটা সেতু নির্মাণ করে দেয়ার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুতি নদের ওপর বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অচিরেই সেখানে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্য যা যা করণীয়, সবই করা হচ্ছে

মো. জাকির হোসেন, কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি)

এ নিয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থী মারুফ হাসান জানায়, স্কুল খোলা থাকতে প্রতিদিনই ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করেছি। এখন স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়াশোনার তাগিদে সাঁকো পারাপার হতেই হচ্ছে। এটি অনেকটা নড়বড়ে হওয়ায় কখন যে ভেঙে পড়ে, বলা যায় না। এর ওপর দিয়ে যেতে আমাদের ভয় লাগে।

একই গ্রামের কৃষক মঞ্জির মিয়া বলেন, সুতি নদের পাড়েই আমার জমিতে আমি ক্ষীরা, আলু, টমেটো, মরিচসহ নানা রকম শাকসবজির চাষ করে থাকি। শুধু যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় উৎপাদিত এসব শাকসবজি সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারি না। এতে আমি অনেক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। সরকারের কাছে আবেদন, যেন আমাদের এই দুর্ভোগ লাঘব করে দেয়।

এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি, মোজাফরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী জুনাইদ আহমেদ এমনটাই মনে করেন, ব্যবসার প্রয়োজনে আমাদের প্রতিনিয়ত নান্দাইল ও তাড়াইল উপজেলায় এই বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। প্রতিদিন এলাকার সাধারণ লোকজনসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা এই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। সাঁকো পার হতে গিয়ে যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কেন্দুয়ার সুতি নদের ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো

এ ব্যাপারে মোজাফরপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম মো. জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, মানুষ আগে নৌকা দিয়ে সুতি নদ পারাপার হতো। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দিয়েছি। সাঁকোটি এখন দুর্বল হয়ে যাওয়ায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে মানুষ পারাপার হচ্ছে। তিনি দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. জাকির হোসেন বলেন, এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুতি নদের ওপর বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অচিরেই সেখানে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্য যা যা করণীয়, সবই করা হচ্ছে।

এনএ