লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি চাওয়ায় গৃহকর্মীকে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে কৃষি ব্যাংক রায়পুর শাখার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্বাছ উদ্দিন রতনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বুধবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মৃধা।

তিনি বলেন, মামলাটি আদালতের বিচারক রায়হান চৌধুরী আমলে নিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আদালতের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে আব্বাছ উদ্দিন বলেন, তার (জাহানারা, ছদ্মনাম) সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়েছে। সামাজিকভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে একটি কুচক্রী মহল তাকে দিয়ে এ অভিযোগ করিয়েছে। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

এজাহার থেকে জানা যায়, বাদী ‘জাহানারা’ রায়পুর পৌরসভায় বসবাস করেন। অভিযুক্ত আব্বাছও একই এলাকার বাসিন্দা। গৃহকর্মীর কাজে যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন সময় আব্বাছ তাকে কুপ্রস্তাব দিতেন। এতে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালের ১০ মার্চ এলাকার একটি সুপারি বাগানে নিয়ে আব্বাছ তাকে ধর্ষণ করেন। আট দিন পর কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে আব্বাছ তাকে জোর করে বাসায় নিয়ে ফের ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিলে কোরআন শপথ করে তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। এভাবে রাজি না হওয়ায় তখন স্থানীয় একটি মসজিদের পাঞ্জেগানা ইমাম এনে দোয়া-দরুদ পড়ে তাকে বিয়ে করেন আব্বাছ। এরপর থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেন। 

২০০২ সালে আব্বাছ নিজ বাসায় তাকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রথম স্ত্রীর অনুপস্থিতি ও বিভিন্ন স্থানে নিয়ে আব্বাছ তার সঙ্গে বসবাস করতেন। লোকলজ্জার ভয় দেখিয়ে আব্বাস কয়েকবার তার গর্ভপাত করিয়েছেন।

২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ফের শাহিনুর গর্ভধারণ করেন। এবার আব্বাছ সন্তান নষ্ট করতে চাইলেও জাহানারা তাতে রাজি হননি। তখন আব্বাছ ভাড়া বাসায় নিয়ে রাখেন তাকে। তারপর ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট জাহানারা একটি ছেলেসন্তান জন্ম দেন। তিনি তখন সন্তানের টিকা কার্ডে বাবার নামের স্থলে আব্বাছের নাম দেন। কিন্তু হোল্ডিং নম্বর দিতে বললে আব্বাছ তাতে বাধা দেন।

এর মাঝখানে জাহানারা কাবিন করে স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি চাইলে আব্বাছ কালক্ষেপণ করেন। সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য আব্বাছের এনআইডি ও বাসার হোল্ডিং নম্বর চাইতে বাসায় গেলেও তা দেননি তিনি। এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে জাহানারা ও তার সন্তানকে হত্যার হুমকি দেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো আদালতের আদেশ পাইনি। আদেশের কাগজ হাতে পেলেই তদন্ত করে যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএ