অবকাঠামোসহ নানা সংকটের মধ্যদিয়ে চলছে বাগেরহাটের বিসিক শিল্প নগরী। দুই দশকেও এই শিল্প নগরীতে লাগেনি তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া। ফলে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এই অবস্থায় শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখতে দ্রুত অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

তবে বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. শরিফ সরদার জানিয়েছেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুপেয় পানির সংকট, খানাখন্দে ভরা রাস্তা, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বাগেরহাটের একমাত্র বিসিক শিল্প নগরী। রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে পরিবহন খরচ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি জোয়ারের পানি বাড়লে প্লাবিত হয় বিসিকের রাস্তাঘাট ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

বাগেরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এক দশক আগেও এখানে ৫৭টি শিল্পকারখানা চালু ছিল। কিন্তু ভঙ্গুর অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে বর্তমানে ৩৭টি প্রতিষ্ঠান টিকে রয়েছে।

বিসিক শিল্প নগরীতে কাজ করা একাধিক শ্রমিক বলেন, রাস্তা খারাপের পাশাপাশি বৃষ্টির সময় পানিতে রাস্তা নিমজ্জিত থাকায় কোনো রিকশাচালক আসতে চায় না। সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। গরমের সময় পানি কিনে খেতে হয়। আর বৃষ্টি হলে সেই পানি খাই। রান্না ও গোসলের পানির ব্যবস্থা করতে হয় বাইরে থেকে। সমস্যা সমাধানে দ্রুত রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।

রিকশাচালক আফজাল শেখ জানান, বিসিকের মধ্যে রিকশা নিলেই অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় রিকশার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়ে যায়। ইটের খোয়ায় টায়ার ফুটো হয়ে যায়।

ভাই ভাই ডাল মিলের মালিক কমল দাস জানান, পণ্য সরবরাহ ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতে হয় আমাদের। কিন্তু রাস্তা খারাপের কারণে খুবই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কেউ কেউ বন্ধ করে দিয়েছে তাদের ব্যবসা।

সাহা এন্টারপ্রাইজের অশোক কুমার সাহা বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে বিসিক শিল্প নগরীতে আমরা ব্যবসা করি। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এখানে আশারূপ উন্নয়ন হয়নি। সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই, রাস্তা-ঘাট ভাঙা, বৃষ্টি বা জোয়ারে পানি উঠাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আমরা। এভাবে চলতে থাকলে অন্যান্য অনেক মিলের মতো আমাদেরও কারখানা বন্ধ করে চলে যেতে হবে।

বাগেহাট বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সভাপতি শিব প্রসাদ ঘোষ বলেন, বিসিকের অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের কাছে বার বার গেছি। কিন্তু কোনো উন্নয়ন হয়নি আমাদের। এতগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকার পরও এখানে ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এখানে নাকি লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকায় কি হয়, কি কাজ করে  আমরা জানতেও পারি না।

তিনি আরও বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে বিসিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান করার আগ্রহ হারাবে ব্যবসায়ীরা। বিসিককে সচল করতে দ্রুত  রাস্তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

বিসিক শিল্পনগরী বাগেরহাটের উপ-ব্যবস্থাপক মো. শরিফ সরদার বলেন, শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) পক্ষ থেকে ১৯৯৬ সালে শহরের ভৈরব নদের পাশে প্রায় ২১ একর জমির ওপর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়। এই শিল্প নগরীতে ১২৩টি প্লট রয়েছে।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিসিক শিল্প নগরীতে অনেক কাজ রয়েছে। সব কাজ তো এক দিনে করা সম্ভব নয়। তবে কিছু সড়কের সংস্কার ও গেট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি আমরা চেষ্টা করছি যথাসম্ভব ভোগান্তি দূর করে বিসিক শিল্প নগরীকে ব্যবসায়ী বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে।

তানজীম আহমেদ/এসপি