বান্দরবানের টংকাবতী বন রেঞ্জ ও আশপাশ এলাকার কয়েকটি মৌজা থেকে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে প্রাকৃতিক বনায়নের গাছ। বহিরাগত কিছু সিন্ডিকেট পাহাড়ের বাইরের অংশের আবরণ ঠিক রেখে বনের ভেতরের অংশের কাঠ কেটে সাবাড় করলেও অদৃশ্য কারণে নীরব বন বিভাগ।

জানা যায়, চোরাকারবারিরা বনের ভেতর কাঠুরিয়া দ্বারা গাছ কেটে হাতি দিয়ে গাছগুলো বনের বাইরে নিয়ে যায়। এসব কাঠ পাচার হচ্ছে পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া হয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায়। বড় গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ইটভাটার জন্য চারাগাছও সাবাড় করছে চক্রটি।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ৩০৯ নং দক্ষিণ হাঙ্গর, ৩১১ হরিণঝিরি, ৩১২ নম্বর পানছড়ি মৌজার বিভিন্ন স্থান থেকে দিনরাত সমানতালে প্রাকৃতিক বন কেটে নিয়ে যাচ্ছে আবদুর রহিম কোম্পানির নামে একটি সিন্ডিকেট।

তবে ওই কাঠ চোরাকারবারি চক্রের দাবি, এসব গাছ কোনো বনায়নের নয়। টাকার বিনিময়ে ব্যক্তিমালিকানার জমির গাছ কাটছে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা রুইঅং কার্বারী জানান, টংকাবতী ও হরিণঝিরি দুটি মৌজায় একসময় প্রাকৃতিক বন গাছে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কিছু মানুষের সহায়তায় বহিরাগত কাঠ চোরাকারবারি আবদুর রহিম কোম্পানির লোকজন অব্যাহতভাবে প্রাকৃতিক বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

চোরাকারবারিরা বনের ভেতর কাঠুরিয়া দ্বারা গাছ কেটে চারটি হাতি দিয়ে গাছগুলো বনের বাইরে নিয়ে যায়। বড় গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ইটভাটার জন্য চারাগাছও সাবাড় করছে চক্রটি।

জানতে চাইলে ৩০৯ নং দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজার হেডম্যান পাইরিং ম্রো বলেন, তার মৌজায় মাঝেমধ্যে কাঠ পরিবহনে কয়েকটি হাতি দেখা যায়। এসব হাতি দিয়ে আবদুর রহিম কোম্পানি নামে লোহাগাড়ার এক ব্যবসায়ী গাছ নিয়ে যান।

জানা গেছে, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম এলে কাঠ চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা বনের ভেতরে শ্রমিক পাঠিয়ে পাহাড়ের গাছগুলো কাটে এবং হাতি দিয়ে বড় গাছগুলো টংকাবর্তী এলাকায় নিয়ে আসে। পরে সেখান থেকে বিভিন্ন সাইজে করাত দিয়ে কেটে ট্রাকযোগে পাচার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শেষে বনের ভেতর থেকে কাঠ পরিবহনের সুবিধার্থে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়। আর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পুরো শুষ্ক মৌসুমে ট্রাকে ভরে কাঠগুলো রঙিমুখ-নাফারটিলা-চরম্বা সড়ক হয়ে লোহাগাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সম্প্রতি দেখা যায়, টংকাবর্তী এলাকায় রাস্তার পাশে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন কিছু শ্রমিক। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা এই প্রতিবেদককে জানান, তারা লোহাগাড়ার জনৈক আবদুর রহিম কোম্পানির গাছগুলো কেটে ট্রাকে তুলে দেন। আরেকটি গ্রুপ বনের ভেতর থেকে এই গাছগুলো পাঠান। তবে কাঠের বৈধতার বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।

বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা জানান, আইন অনুযায়ী যেকোনো ভূমি থেকে গাছ কাটতে হলে অনুমোদন নিতে হবে। অন্যথায় তা অবৈধ।

বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাইনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি মাত্র নতুন এই রেঞ্জে যোগদান করেছি, সমতল আর পাহাড়ের বনায়নের আইনকানুন এক নয়। টংকাবতী এলাকায় সরকারি কোনো বনায়ন নেই। তবে ওই দিকে কাঠ পাচার হয় বলে তিনি শুনেছেন। প্রয়োজনে সরেজমিনে দেখবেন।

রিজভী রাহাত/এনএ