১০ বছর আগেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের জটলা লেগে থাকত। সময়ের পরিক্রমায় এখন তা ভূতুড়ে বাড়ি। আশপাশের বাসিন্দাদের ফেলা ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধে দাঁড়ানো দায়। বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্র ঐতিহাসিক বিবি পুকুরের পূর্বপাড়ে বিভাগীয় পাবলিক কল এবং টেলিগ্রাম অফিসের (পিসিও) চিত্র এমন।

মূলত মোবাইল ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে টেলিফোন ব্যবস্থা। সেই ধাক্কায় প্রথমাবস্থায় বন্ধ এবং পরবর্তীতে টেলিগ্রাম ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয় বলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে বরিশালের এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

নগরবাসী বলছেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রের সরকারি এই স্থাপনা অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে বাসিন্দাদের উপকার হবে। নয়তো টেলিফোন ব্যবস্থার উন্নতি করে আবারও চালু করা উচিত।

যদিও কোনো পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেননি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) বরিশালের উপ-মহাব্যবস্থাপক। এমনকি এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনাও পাঠানো হয়নি মন্ত্রণালয়ে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডের সরদার পাড়ার বাসিন্দা আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, দেশ এবং দেশের বাইরে দ্রুত যোগাযোগ করতে হলে এখানেই আমাদের আসতে হতো। যখন অফিসটি চালু ছিল তখন এখানে নিয়মিত এসে কল করতাম। বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের একমাত্র আধুনিক ব্যবস্থা ছিল এই পিসিও কল অফিস। বিভাগে এই অফিস ছাড়া আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না। লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কল করতে হতো। মানুষ ভিড় করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন।

তিনি আরও বলেন, কল অফিসে যখন ভিড় সামাল দিতে পারছিল না তখন শহরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি টেলিফোন বুথ করা হয়েছিল। এখন এত বছর পর এসে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে খারাপ লাগছে। তাছাড়া সরকারি সম্পত্তি এভাবে পড়ে থাকাটা উচিত না। টেলিফোন ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা যেতে পারে, নয়তো এই ভবনে অন্য যেকোনো সরকারি অফিস এনে তার কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে। এতে নগরবাসীর উপকার হবে।   

কেবি হেমায়েত উদ্দিন গির্জা মহল্লার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ২০১৫ সালে এখানে টাকা দিয়ে কল করেছি। তখন যোগাযোগ বলতেই বুঝতাম পিসিও কল অফিস। ভবনটি এখন যেভাবে ফেলে রাখা হয়েছে তা আসলে সরকারি সম্পত্তির অপচয়। এই ভবনটি আরও উন্নত করা উচিত। মোবাইলের এই যুগে টেলিফোন ব্যবস্থা আবার চালু করা অসম্ভব। তবে শহরের এমন কেন্দ্রে একটি স্থাপনা বছরের পর বছর ময়লার ভাগাড় করে ফেলে রাখা ঠিক না। আমি মনে করি, সরকারের অন্য সরকারি অফিস এখানে চালু উচিত।

দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে কল অফিসে বসবাসকারী লাইনম্যান মনির হোসেন। তিনি জানান, ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি লাইনম্যান পদে এই অফিসে যোগ দেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই অফিসেই রয়েছেন। বর্তমানে দ্বিতীয় তলায় পুরো পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। আর অফিসের গেটের কাছে ভ্যানে ফাস্টফুড বিক্রি করেন।

মনির বলেন, মোবাইল আসার আগে অফিসে কল করতে আসা মানুষদের লাইন অফিস কম্পাউন্ড ছাড়িয়ে রাস্তা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকতো। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এইসব দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। মনিরের দাবি, পর্যাপ্ত আধুনিকায়ন করে আবারও টেলিফোন ব্যবস্থা চালু করা হোক।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শহরের কিছু ভাসমান মাদকসেবী নিয়মিত এই ভবন এলাকায় ঢুকে মাদক সেবন করেন। বিবি পুকুরপাড় সংলগ্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের পণ্য-সামগ্রী রাখতে ব্যবহার করেন ভবনটি। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের ছোট ভ্যানে করে বাসা-বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে এনে এই ভবনের গেটের মধ্যে ফেলে জমা করা হয়। পরে তা বড় ট্রাক এসে নিয়ে যায়। এ ছাড়া মল-মূত্র ত্যাগের জন্য অনেকেই ব্যবহার করেন কম্পাউন্ডটি।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের বরিশালের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শামীম ফকির গণমাধ্যমে কথা বলার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও অনুমতি পাননি। একইসঙ্গে বিটিসিএলের আওতাধীন বিভাগীয় পাবলিক কল ও টেলিগ্রাম অফিসটি তার অধীনে থাকলেও এ নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না তা জানাতে পারেননি। যদিও ময়লা আবর্জনার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেছেন, একাধিকবার সিটি করপোরেশনকে টেলিগ্রাম অফিসটির কম্পাউন্ডে ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তারা ময়লা ফেলছেই।

এসপি