সীমানা জটিলতার মামলায় দীর্ঘ দিন ধরে স্থগিত থাকা নীলফামারী পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ নভেম্বর এ পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানান, তৃতীয় ধাপে আগামী ২৮ নভেম্বর ১ হাজার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একইদিন অনুষ্ঠিত হবে ১০ পৌরসভার নির্বাচনও। সেই তালিকায় নীলফামারী পৌরসভার নামও রয়েছে।

নীলফামারী পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালে। সে হিসেবে এই পৌরসভার নির্বাচন হতে যাচ্ছে প্রায় দশ বছর পর। দীর্ঘদিন পর নীলফামারী পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় এলাকার ভোটার ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষ হবে আগামী ৪ নভেম্বর। প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ১১ নভেম্বর এবং ভোটগ্রহণ হবে ২৮ নভেম্বর।

সীমানা জটিলতার কারণে উচ্চ আদালতে দায়ের করা মামলার বাদী জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রশিদ মঞ্জু জানান, নীলফামারী পৌরসভার প্রস্তাবের (৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হলেও সীমানা বৃদ্ধি করে ১৫টি ওয়ার্ড গঠন) ভিত্তিতে তাদের সীমানা বাড়িয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গ্রেজেট হিমেবে পাস করে। ইটাখোলাসহ পার্শ্ববর্তী কুন্দুপুকুর ও খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের বড় একটি অংশ চলে যায় পৌরসভায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলাম।

তিনি জানান, এলাকায় জরিপ করে দেখা গেছে ওই সব এলাকাবাসী পৌরসভার সঙ্গে সংযুক্ত হতে আগ্রহী। সেই কারণে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি আমি উচ্চ আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নেই। ফলে নীলফামারী পৌরসভা নির্বাচনে আর কোনো বাধা নেই।

নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আফতাবুজ্জামান জানান, নীলফামারী পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি। নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রথম সভা করেন ২০১১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। পৌরসভার পার্শ্ববর্তী ইটাখোলা, কুন্দুপুকুর, খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ পৌরসভার সঙ্গে সংযুক্ত করে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।

তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করায় নীলফামারী পৌরসভার ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। নীলফামারী পৌরসভার মেয়াদ ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় নিয়ম অনুযায়ী আগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এ ছাড়া কুন্দুপুকুর, ইটাখোলা ও খোকশাবাড়ি ইউনিয়নে জনপ্রতিধিদের মেয়াদ শেষ হলেও তারাও দায়িত্ব পালন করে আসছে।

নীলফামারী পৌরসভায় টানা তিন দশকের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ চিকিৎসাজনিত কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। পারিবারিক সূত্র মতে, তিনি আগামী ১৯ অক্টোবর দেশে ফিরবেন এবং পুনরায় পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সাল থেকে নীলফামারী টাউন কমিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ লোকাল কাউন্সিল অ্যান্ড মিউনিসিপাল কমিটিস (অ্যামেমেন্ট) অর্ডার-১৯৭২ অনুযায়ী নীলফামারী টাউন কমিটিকে নীলফামারী পৌরসভা (গ শ্রেণির পৌরসভা) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে নীলফামারী পৌরসভা ২০০৮ সালের ২৩ মার্চ ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে। নীলফামারী পৌরসভার মোট আয়তন ১৯.২৮ বর্গ কিলোমিটার। এর সীমানা বাড়িয়ে ১৫টি ওয়ার্ড গঠন করতে পার্শ্ববর্তী টুপামারী, কুন্দপুকুর, ইটাখোলা ও খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ সংযুক্ত করা হয়েছে।

এসপি