পল্লী বিদ্যুতের নতুন উপকেন্দ্র থেকে আরেক উপকেন্দ্রে সঞ্চালন তার টাঙানোর জন্য কেটে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো গাছের মাথা। গাছগুলো ন্যাড়া হয়ে সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে। গণহারে গাছের ডালপালা ও মাথা কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য হারানোর পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। 

তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই গাছের মাথা এবং ডালপালা কাটা হয়েছে। মূলত ঝড়, বৃষ্টি ও দুর্ঘটনা এড়াতে ও বিদ্যুৎ নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালুর রাখার জন্য এমনটা করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া থেকে সাঘরদিঘীর বেইলা সড়কের দুই পাশের মেহগুনি, আগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মাথা ও ডালপালা কাটার চিত্র দেখা গেছে। এক যুগ আগে সারিবদ্ধভাবে সড়কের দুই পাশে লাগানো গাছগুলো এখন মাথাবিহীন দাঁড়িয়ে আছে। ফলে সেখানে কোনো পাখির শব্দ শুনতে পায় না স্থানীয়রা। সড়কের দুই পাশের অনেক গাছও মরে যাচ্ছে।

দুই বছর আগে ঘাটাইলের ধলাপাড়া ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ উপকেন্দ্র থেকে বেইলা উপকেন্দ্র পর্যন্ত ৩৩/১১.১০ এমভিএর বিদ্যুতের সঞ্চালন তার টাঙানোর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এই গাছ কাটেন।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীন ঘাটাইল (ধলাপাড়া) এলাকায় একটি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। দুই বছর আগে ওই উপকেন্দ্র থেকে ঘাটাইল-ধলাপাড়া-সাঘরদিঘী হয়ে সাঘরদিঘী-মধুপুর সড়কের বেইলা উপকেন্দ্রের সঙ্গে সঞ্চালন লাইনের তার টানানো হয়। সেই সময় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের কয়েক হাজার গাছের মাথা ও ডালপালা গণহারে কেটে ফেলা হয়। এতে মেহগুনি, নিম, আগর, আকাশমনি, শাল, গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা পড়ে।

ধলাপাড়া গ্রামের ইয়াকুব, মরিয়ম, শহিদুলসহ অনেকেই বলেন, দুই বছর হল সড়কের পাশের গাছগুলোর ডালপালাসহ মাথা কেটে ফেলেছে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন। সড়কের পাশে রাখা ছোট ছোট ডালপালা স্থানীয়রা নিয়ে গেছে। 

বন বিভাগের ঘাটাইলের ধলাপাড়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন তার টাঙানোর জন্য বন বিভাগের কোনো গাছ কাটা পড়েনি। গাছগুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওয়তায়।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ময়মনসিংহ-১ জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. হাসিমুজ্জামান বলেন, উপকেন্দ্র স্থাপনের এক বছর পরই সঞ্চালন তার টাঙানো হয়েছিল। তাও দুই বছর আগে। সড়কের পাশে গাছগুলো কাটতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর পরই গাছের ডালপালা ও মাথা কাটা হয়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঘাটাইল জোনালের ডিজিএম বাদল মিয়া বলেন, কারিগরি ভিত্তিতেই বিদ্যুৎ সঞ্চালনের তার দুই বছর আগেই টাঙানো হয়েছিল। সেই সময় গাছগুলোর ডালপালা কাটতে হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী সড়কের পাশ দিয়েই বিদ্যুতের তার টাঙানোর নিয়ম রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই গাছগুলো কাটতে হয়েছে। ধলাপাড়া থেকে বেইলা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের গাছগুলোর ডালপালা ও মাথা কাটা হয়েছে। 

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জোনের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুই বছর আগে বিদ্যুৎ
চালুর জন্য সরেজমিন কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গাছগুলো কাটা হয়েছে। গাছ কাটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। বিদ্যুতের জন্য সড়কের গাছ কাটা দৈনন্দিন কাজ। ঝড়, বৃষ্টি ও দুর্ঘটনারোধে গাছের ডালপালা কাটতে হয়।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কের দুই পাশে যেহেতু আগেই গাছগুলো লাগানো হয়েছিল সেহেতু গাছগুলো রক্ষা করে সঠিক পরিকল্পনা করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টাঙানো উচিত ছিল। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। গাছের মাথা কেটে ফেলা হলে সেই গাছ মারা যাবে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। গাছগুলো বাঁচিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের তার টাঙানো হলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন ঠিক থাকত আবার নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধা দিতে পারত কর্তৃপক্ষ। এটি করতে দুই দফতরের মধ্যে সমন্বয় করে কারিগরি কমিটি করে সঞ্চালন তার নিরাপদ দূরত্বে টাঙানো উচিত ছিল। এখন যেহেতু গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে তাই সেই গাছগুলো বাঁচাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সড়ক ও জনপদের আওতাধীন কোনো সড়কের বর্ধিত কাজ শুরু করার আগে সওজের আরবারি কালচার ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে গাছগুলো কাটা হয়ে থাকে। ওই সড়কের গাছের বিষয়ে আরবারি কালচার কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে পারবে।

এসপি