শফিউল-সুমি দম্পতিকে ঝুপড়ি ঘরে আর থাকতে হবে না

‘শেখ হাসিনা হামাক ঘর দিছেন, জমি আর দালান বাড়ির মালিক বানে দেইল। ছাওয়াপাওয়া নিয়া থাকব, নিজের কপাল নিজে গড়মো। এবার হামা নিজের পায়ে নিজে দাঁড়ামো’ মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বপ্নের ঘর পেয়ে এভাবেই নিজের আনন্দ প্রকাশ করছিলেন সৈয়দপুরের কামারপুকুর এলাকার ইটভাটা শ্রমিক শফিউল ইসলাম।

সারাদিনের কায়িক পরিশ্রম শেষে দুই সন্তান নিয়ে শফিউল-সুমি দম্পতিকে আর ফিরতে হবে না ভাড়া করা ঝুপড়ি ঘরে। ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র এই পরিবার এখন প্রতিদিন ফিরতে পারবেন নিজ ঘরে। শুধু ঘরই নয়, থাকছে নিজ নামে দুই শতক জমি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, সুন্দর বারান্দাসহ বসবাসের নিরাপদ সুবিধা।

শফিউল-সুমির মতো নীলফামারী জেলার ৬৩৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া স্বপ্নের বাড়ি। এরমধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলায় ৯৯টি, সৈয়দপুরে ৩৪টি, ডোমারে ৩৮টি, ডিমলায় ১৮৫টি, জলঢাকায় ১৪১টি ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৪০টি পরিবার রয়েছে।

গণভবন থেকে ভার্চুয়ালে শনিবার (২৩জানুয়ারি) সকালে সৈয়দপুর উপজেলায় নির্মিত এসব ঘরের চাবি, উপকারভোগী পরিবারের নামে জমির দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুবিধাভোগীরদের মাঝে জমির দলিল ও চাবি হস্তান্তর

সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ী মৌজায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়েছেন গৃহকর্মী আফরোজা খাতুন। আফরোজা খাতুনের স্বামী আল মামুন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন স্থানীয় একটি কাগজের মিলে। সামান্য আয়ে তিন ছেলে নিয়ে কষ্টে দিন কাটে তার। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় বর্ষা মৌসুমে। দিনরাত বৃষ্টির পানি ঘরে প্রবেশ করায় নির্ঘুম রাত্রি যাপন করতে হতো তাদের। তবে এখন চোখমুখে আশ্রুসিক্ত আনন্দ।

আফরোজা খাতুন জানান, ‘মানুষের বাসায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। রোদ-বৃষ্টি মাথার ওপর দিয়া গেছে। ছেলে তিনটা নিয়ে কষ্টে দিন কাটতো। শেখ হাসিনার ঘর পাওয়ায় আমরা সকলেই খুশি। আমার বাচ্চাগুলা এখন নিরাপদে থাকবে এখন থাকবে।’

‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য স্বপ্নের নীড় তৈরি করা হয়েছে।

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বপ্নের ঘর

নীলফামারীর গ্রামগুলোতে অনেক দরিদ্র পরিবার বসবাস করেন। এসব মানুষের অনেকেরই জায়গা থাকলেও জোটে না ঘর। আবার কোনোভাবে ঘর নির্মাণ করলেও ঝড়-বৃষ্টি কিংবা অন্য কোনও দুর্যোগে ঘর হারিয়ে এসব মানুষকে আশ্রয় নিতে হয় অন্য কারও বাড়িতে। নীলফামারী জেলার তিস্তা নদীর ভাঙনেই গত দশ বছরে ২ হাজার পরিবারের সবকিছু বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। এভাবে জীবনের চক্রাকারে পরিচালিত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ।

এসব ভূমিহীন ও ঘরহীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানে মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো নীলফামারীতেও নির্মাণ করা হয়েছ গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য পাকা ঘর।

ঘর বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথিরা

নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে জানান, উপকারভোগী প্রতি পরিবারের জন্য দুই শতাংশ জমির ওপর নির্মিত প্রতিটি সেমিপাকা বসতঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি করে বারান্দা, বাথরুম ও রান্নাঘর। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা করে। খুব কম সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বেদখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। নীলফামারীর ৬৩৭ পরিবারের অনুকূলে ১২ দশমিক ৭৪ একর বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

ভার্চুয়াল মাধ্যমে সৈয়দপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলিম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব, নীলফামারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোকসেদুল মমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, সৈয়দপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা নাসিম আহমেদ প্রমুখ।

এমএসআর