কয়েকদিন আগেও তিস্তার বুকে ছিল বালুচর। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেছিল তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। কিন্তু ভারতের গজলডোবার গেট খুলে দেওয়ার পর থেকে সেই চিত্র আর এখন নেই। থৈ থৈ করছে পানি। তলিয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। পানিবন্দী হয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে পাঁচ উপজেলার ২৫ হাজার পরিবারের। 

পানিতে ঘরবাড়ি তালিয়ে যাওয়ায় অনেকেই নিঃস্ব হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সড়কে খোলা আকাশের নিচে। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পানি আরও বাড়লে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটিও তলিয়ে যেতে পারে। তবে হাতীবান্ধা-বড়খাতার তালেব মোড়ের বাইপাস সড়কটি এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে কয়েকটি স্থানে। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও নামমাত্র কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে প্রতিবারের মতো এবারও পানি উন্নয়নের পক্ষ থেকে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তবে এ জিও ব্যাগ কোনো কাজ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

এদিকে তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে লালমনিরহাটে কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, আদিতমারী উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। মাথা গোঁজার আশ্রয় হারিয়ে উঁচু বাঁধে মানবেতর দিন কাটছে হাজারো মানুষের। এছাড়াও গঙ্গাচড়ার বেশ কয়েকটি বাঁধ ভেঙে কালীগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবেশ করছে। যে কারণে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা রংপুর আঞ্চলিক সড়কের সিরাজুল মার্কেট এলাকার পাকা সড়কটি ধসে গেছে। ওই এলাকার মানুষ গাছ কেটে সড়কটি রক্ষার চেষ্টা করছেন। 

ওই এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, সড়ক ধসের প্রায় চার ঘণ্টা পরেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন খবর নেয়নি। তাদের কাছে জিও ব্যাগসহ বাঁধ রক্ষার সরঞ্জাম চাইলেও তারা দেয়নি।

পানিতে ঘরবাড়ি তালিয়ে যাওয়ায় অনেকেই নিঃস্ব হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সড়কে খোলা আকাশের নিচে। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পানি আরও বাড়লে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটিও তলিয়ে যেতে পারে। তবে হাতীবান্ধা-বড়খাতার তালেব মোড়ের বাইপাস সড়কটি এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে কয়েকটি স্থানে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ভারতের গজলডোবায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ প্রান্তে তিস্তার পানি বাড়ছে। তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডারের আমিনগঞ্জ, কাকিনা, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পানিবন্দী পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তালিকা করতে বলা হয়েছে। তারা তালিকা দিলেই শুকনো খাবারসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা করা হবে। এছাড়াও নগদ অর্থ প্রদান করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পানিবন্দী পরিবারের সদস্যরা যেন কোনো রকম কষ্টে না থাকেন সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। পানি বৃদ্ধির খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফুদ্দৌলা বলেন, ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শহররক্ষা বাঁধ কয়েকটি ভেঙে গেছে। তাই তিস্তা তিরুপতি এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এসকেডি