মল্লিকহাটি ও বড়ভিটা এলাকায় পরিযায়ী পাখিদের বাস

শীত এলেই পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর কলকাকলিতে মুখর থাকে মল্লিকহাটি ও বড়ভিটা বিল। এটি নাটোর শহর থেকে প্রায় দুই কিমি দূরে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে। দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে শীতের শুরুতেই এসে যোগ দিয়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি। তাই মল্লিকহাটি ও বড়ভিটা বিল এখন পাখি গ্রাম নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন পাখি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন এই বিলের পাড় মহাসড়কে।

নাটোর সদর উপজেলার নিভৃত মল্লিকহাটি ও বড়ভিটা এলাকায় পরিযায়ী পাখিদের বাস। বেশ কয়েক বছর ধরে এই বিলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেশ-বিদেশ থেকে আসে। সারাদিন বিলে থাকার পর রাতে তারা পার্শ্ববর্তী গাছগাছালিতে আশ্রয় নেয়। আর পাখিদের কলকাকলিতে প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরে উঠেছে এই বিল।

এদের মধ্যে বালিহাঁস, বাটুল, চোখাচোখি, শামুকখোল, খঞ্জনাসহ অন্যান্য পাখির চঞ্চল ওড়াউড়ি মুগ্ধ করে যেকোনো মানুষকে। তাই তো প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে পাখিপ্রেমীরা।

পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে বিলের আশপাশের গ্রামের মানুষ নিজেদের উদ্যোগে মল্লিকহাটি ও বড়ভিটা বিলকে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড়ভিটা বিলের মতো নাটোরের বিভিন্ন বিল ও জলাধার এখন পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে। এসব বিলে পানির পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে। অন্যদিকে পরিযায়ী পাখিদের রক্ষায় পরিবেশকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনও তৎপর।

এ বিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলার মল্লিকহাটি গ্রামের বাসিন্দা রহিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, পাখির এই দৃশ্য আমাদের কাছে খুব ভালো লাগে। পরিযায়ী পাখি আসে আমাদের বিলে, আরও অনেক ধরনের পাখি আসে। পাখি দেখার জন্য অনেক সময় অনেক দর্শনার্থী আসে এবং বহু লোকে সমাগম হয় এখানে। সকাল-বিকেল-দুপুরে অনেক গাড়ি-ঘোড়া নিয়ে আসা বহু লোকের বিচরণ হয়। আমাদের কাছেও খুব ভালো লাগে।

বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেশ-বিদেশ থেকে আসে

তিনি জানান, পরিযায়ী পাখি আসা এ দেশের ঐতিহ্য। মল্লিকহাটি বিলেও হাজারো লাখো পাখি বসে। এখানে কোনো পাখি শিকার করা হয় না। যদি কখনো ওটা দেখেন, তাহলে তাদের বাধা দেন। তিনি আরও বলেন, বহু ধরনের অতিথি পাখি যেমন নলকাক, বালাহাঁস, সারসসহ বহু ধরনের পাখি আসে। আমরা সকাল-বিকেলই দেখি। আজ সকালবেলা আমার জমির আলে দাঁড়ায়া থেকে অনেকক্ষণ দেখলাম, দেখতে অপূর্ব একটা দূশ্য। আসলেই খুব ভালো লাগে।

দর্শনার্থী মাসুদ রানা জানান, আমি অতিথি পাখি দেখতে এখানে এসছি। খুব সুন্দর পরিবেশ ও মনোমুগ্ধকর এই জায়গা। অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ। এখানকার মানুষজনও খুব ভালো। তারা অতিথি পাখি শিকার করে না। সাদরে গ্রহণ করেছে এদের। দেখতে পাচ্ছেন যে আপনারা এখানে অতিথি পাখি কত সুন্দরভাবে বিলের মধ্যে উড়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের এই বিলের চারদিকে যাদের জায়গা, তারাও সহযোগিতা করছে।

নাটোরে চলনবিলসহ প্রচুর জলাশয় আছে। প্রতিবছর আমাদের এখানে শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখি আসে প্রচুর। এ বছর বিশেষ করে মল্লিকহাটি বিলে পরিযায়ী পাখি প্রচুর আসছে। পাখিগুলোকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেব। আমরা চেষ্টা করেছি যেন অতিথি পাখিগুলো কেউ নিধন না করে। কেউ যদি নিধন করার চেষ্টা করে, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেব।

মো. শাহরিয়াজ, জেলা প্রশাসক

পরিযায়ী পাখি যতে নির্বিঘ্নে এখানে থাকতে পারে, যত দিন এরা থাকবে, যেন পাখিদের কেউ না শিকার করে এমনটাই দাবি দর্শনার্থী মাসুদ রানার। তিনি বলেন, অতিথি পাখি আমাদের ভালো লাগে। একটা ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে এটাকে ঘোষণা করা হোক। যাতে প্রতিবছরই এরা এলে আমরা নিরাপত্তা দিতে পারি। এ জন্য আমি বলব যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরেকটু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

স্থানীয় এলাকাবাসী রাজা জানান, বহু লোক দেখতে আসে। ভালো লাগে আমারেক। এখানে লক্ষ লক্ষ পাখি আসে দুই বিলে। বহুত দূরে দূরে থেকে লোক আসে, দেখে ছবি তুলা লিয়া যায়। কেউ শিকার-টিকার করে না। রাত্রিতে হয়তো চুরি করা মারে। এই বিলে মারে না, ওই অন্যান্য বিলে মারে। ফজরের নামাজের পর পর শুরু হয় আসা, যায় হচ্ছে সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যার দিকে এখান থেকে রওনা দেয় পাখি।

মো. মাহাফুজ হোসেন জানান, আমার মহল্লার পাশেই পাখির অভয়াশ্রম। অনেক পাখি এখানে সকালবেলা আসে। পাখির ডাকেই আমাদের ঘুম ভাঙে। এত সুন্দর একটা পরিবেশ বা সারাটা দিনই এরা অনেক চেঁচামেচি করে, এদের ডাক অনেক সুন্দর লাগে আমাদের। অনেক দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকও আমাদের কাছে আসে। অনেকে সারা দিন সময় দেয়। আমাদের পাখির দ্বারা কোনো সমস্যা নেই। পাখি ভালোই লাগে। বিলে পাখি আসার কারণে তিন-চার বছর আগে বিলে মানুষ মাছ মারত। কিন্তু এখন আর নামে না পাখির কারণে। প্রশাসন সহযোগিতা করলে অনেক ভালো কিছু হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ ঢাকা পোস্টকে জানান, নাটোরে চলনবিলসহ প্রচুর জলাশয় আছে। প্রতিবছর আমাদের এখানে শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখি আসে প্রচুর। এ বছর বিশেষ করে মল্লিকহাটি বিলে পরিযায়ী পাখি প্রচুর আসছে। পাখিগুলোকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেব। আমরা চেষ্টা করেছি যেন অতিথি পাখিগুলো কেউ নিধন না করে। কেউ যদি নিধন করার চেষ্টা করে, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেব।

এনএ