আসামির বদলে হাজিরা দিতে গিয়ে ৩ দিনের রিমান্ডে বৃদ্ধ
মূল আসামি তাছের আহমেদ (বায়ে) এবং রিমান্ডে নেওয়া অজ্ঞাত বৃদ্ধ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আলোচিত রাশেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি তাছের আহমেদের বদলি হিসেবে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন অজ্ঞাতপরিচয়ের এক বৃদ্ধ। এ সময় মামলার সাক্ষীরা তাকে ভুয়া বলে অভিযোগ তোলেন।
পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। সোমবার (২৫ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত ওই ব্যক্তির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক সেলিম।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জুন সকালে উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামে মোবাইল চুরির অভিযোগে কথিত পীর তাছের ফকিরের দরবার শরীফের ভেতরে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (২৮) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
রাশেদ দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের হরিনগাছী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি ওই দরবার শরিফের মুরিদ ছিলেন এবং ঘটনার ৪-৫ মাস আগে থেকেই ওই দরবার শরিফে বসবাস করতেন।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় স্থানীয় চরদিয়া পাক দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে দৌলতপুর থানা পুলিশ ছয়জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। তবে মামলার প্রধান আসামি তাছের আহমেদসহ তার ভক্ত অনুসারীরা আত্মগোপন করেন।
এদিকে হত্যা মামলাটি দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার আদালতে এক মুরিদকে দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদ সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয়। সম্প্রতি ‘নকল’ তাছের সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করানোর বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। আদালত পাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. সেলিম বলেন, বদলি আত্মসমর্পণ করতে এসে মামলার সাক্ষীদের চোখে ধরা পড়ে। মূল আসামি চরদিয়াড় দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের বদলে অন্য কাউকে আদালতে আত্মসমর্পণ করা হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আসল আসামি না। তার চেহারার সঙ্গে আসল আসামির চেহারা ও বয়সের মিল নেই। আদালতে যিনি তাছের হিসেবে আত্মসমর্পণ করেছেন তিনি প্রকৃতপক্ষে তাছের নন, অন্য কেউ। বুধবার থেকে তার রিমান্ড শুরু হবে। তবে রিমান্ড শেষে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।
মামলার সাক্ষী রেজা বলেন, সোমবার তাছের নামের ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করা হয়। তাছেরের ছবির জায়গায় কম্পিউটারের সাহায্যে ওই ব্যক্তির ছবি বসিয়ে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা সাক্ষীরা মুখ দেখে প্রকৃত তাছের নন বলে আদালতকে জানায়।
এ ব্যাপারে কথিত পীর তাছেরের আইনজীবী আব্দুর রশিদ রানা জানান, আদালত আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। যে আত্মসমর্পণ করেছে সে আসল নাকি নকল পুলিশের রিমান্ডে তা জানা যাবে।
কুষ্টিয়া জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী বলেন, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদালতের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদের আসল জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কল্যাণপুর দরবার শরীফের কথিত পীর তাছের ও তার ক্যাডারদের বিরুদ্ধে দরবার শরীফ সংলগ্ন হিসনা নদী ও স্থানীয় লোকজনের জমি জোরপূর্বক দখল করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দরবারের সশস্ত্র ভক্ত ক্যাডারদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন ভয়ে মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছে না।
নদীর জায়গা দখলের ঘটনায় দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন, দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার, দৌলতপুর থানার ওসি নাসির উদ্দিন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা নদী দখলমুক্ত করার নির্দেশ দিলেও আজও তা উদ্ধার হয়নি।
রাজু আহমেদ/এসপি