অভাব আর দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে বড় হচ্ছিল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুল খালেকের মেয়ে মৌসুমী আক্তার (১৪)। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবার অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ভর্তিও হয়েছিল। সংসারে দৈন্যদশা ও বনিবনা না হওয়ায় মা বাবার সংসার ছেড়েছিলেন। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে পিষ্ট মৌসুমী মায়ের অভাব মেনে নিতে পারছিল না। কান্নাকাটি করতে করতে এক সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মৌসুমী হঠাৎ হঠাৎ উধাও হয়ে যেত। পরে তাকে খুঁজে এনে বাড়িতে রাখা হতো। এক পর্যায়ে মৌসুমীর পায়ে পরানো হয় শিকল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে খবরটি পৌঁছে গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজের কাছে। তিনি এই কিশোরীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। চিকিৎসা ও সেবাযত্নে মৌসুমী এখন শিকলমুক্ত জীবনে।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে মৌসুমীকে দেখতে তার বাড়িতে হাজির হন সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ। এ সময় কিশোরীর পরিবারকে বস্ত্র ও নগদ অর্থসহায়তা দেওয়া হয়।

এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শনই হচ্ছে মানবিক হওয়া ও মানুষের পাশে দাঁড়ানো। বঙ্গবন্ধু আমাদের আদর্শ হিসেবে সে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আর দলীয় সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সে পথ দেখিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সভ্য সমাজে কোনো মানুষের পায়ে শিকল থাকতে পারে না। বিষয়টি দেখে আমি থমকে গিয়েছিলাম। তাই ৪ আগস্ট মেয়েটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিই। চিকিৎসায় মেয়েটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। এটা আমাদের সবার জন্য একটি ভালো খবর।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষন দাস বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের উদ্যোগে মেয়েটির চিকিৎসা প্রথমে গাজীপুর ও ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে করা হয়। সেখানে ১৯ দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর তার উন্নতি হওয়ায় বাড়িতে পাঠানো হয়। সে এখন অনেকটাই সুস্থ আছে। চিকিৎসকের ফলোআপে রয়েছে। এখন আর তাকে শিকলে বেঁধে রাখতে হয় না। তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার স্থানীয় সাংসদ বহন করেছেন।

মৌসুমীর বাবা আব্দুল খালেক জানান, তার দুই মেয়ে। মৌসুমী বড়। দারিদ্র্যতার কারণে তার স্ত্রী চলে যাওয়ায় কান্নকাটি করে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। পরে তাকে শিকলে বেঁধে রাখতে হয়েছিল। অভাবের কারণে তার চিকিৎসাও করানো যাচ্ছিল না। অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদেস্যর উদ্যোগে চিকিৎসার পর তার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছে। শিকলও খুলে দেওয়া হয়েছে। তার মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নও তিনি এখন দেখতে পারছেন।

শিহাব খান/এসপি