সব শেষ হয়া গেল। আমার আর কিছুই রইল না। নিজের ২৫ শতক জমি বিক্রি করে এবং ব্র্যাক (এনজিও) থেকে ৮ লাখ টাকা লোন করে ১৪ মাস আগে ২০ লাখ টাকা দিয়ে ট্রাকটা কিনছি। আমার ট্রাকটি ফেরির ভেতরে আটকা পড়েছে। গাড়ি চালায়া যা কামাই করতাম, তা দিয়া লোনের কিস্তি আর সংসার চালাইতাম। কিন্তু এখন কী করমু? কেমনে লোন শোধ করমু? কিস্তি দিমু কেমনে?

বুধবার (২৭ অক্টোবর) বেলা দেড়টার দিকে পাটুরিয়ার ৫ নং ফেরিঘাটে আলাপকালে উল্টে যাওয়া ফেরি থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরা ট্রাকচালক ওমর আলী এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম এলাকায়। তার বাবার নাম লিয়াকত আলী।

ওমর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ট্রাকের নম্বর ঢাকা মেট্রো-ট ২০-২০৫০। ফেরিতে ওঠার পরই আমি বলছি ফেরি কাত হয়ে গেছে। তারা বলে, এটা কোনো সমস্যা না। ফেরি ছাইড়া দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। তারপর মাঝনদীতে আসার পর ফেরি আরও কাত হয়ে যায়। ঘাটে ভিড়ার পরপরই ফেরি কাত হয়ে ডুবে যায়। লাফ দিয়ে কোনোরকমে নিজের জীবনটা বাঁচিয়েছি। এই দুর্ঘটনায় আমার সব শেষ হইয়া গেল।

তিনি আরও বলেন, মাঝনদীতে আসার পরে যখন দেখি ফেরিটা কাত হয়ে গেছে, তখন আমার গাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা হেলপারকে ডেকে তুলি। পরে গাড়ি থেকে নেমে নিচে দাঁড়াই। ফেরিটি পাটুরিয়া ঘাটে ভিড়ার কিছুক্ষণ পরেই কাত হয়ে ডুবে যায়।

বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৭টি পণ্যবাহী যানবাহনসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে পাটুরিয়া ৫ নং ফেরিঘাট পন্টুনে নোঙর করে রো রো ফেরি আমানত শাহ। এ সময় ফেরি থেকে তিনটি ট্রাক ঝুঁকি নিয়ে নামতে পারলেও বাকি ট্রাকগুলো নিয়ে ফেরিটি উল্টে যায়।

এ ঘটনার পর ফেরির ভেতরে আটকা পড়ে ১৭টি ট্রাক। ট্রাকগুলো উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হয় উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামজা’। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টায় নয়টি ট্রাক, একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো হতাহত বা কোনো মরদেহ উদ্ধার হয়নি বলে জানিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে।

সোহেল হোসেন/এনএ