রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী রহিদুল ইসলাম রনি মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন ২২ বছর বয়সী এ তরুণ। রোববার (৩১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

রহিদুল ইসলাম রনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি রংপুর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ময়নাকুটি পরশুরাম এলাকার চিলারঝাড় গ্রামে। 

ঢাকা পোস্টকে রনির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বন্ধু ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সাকিব আল জামান। 

সোমবার (০১ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে পরশুরামের চিলারঝাড় বাজার সংলগ্ন মাদরাসা মাঠে রহিদুল ইসলাম রনির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে বলে জানা গেছে।

কৃষক বাবা আবদুর রহমান ও গৃহিণী মা রওশন আরা দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে রনি ছিল সবার বড়। তার ছোট ভাই রওশন হাবিব এসএসসি পরীক্ষার্থী। আর একমাত্র বোন রুশতা পড়ছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রহিদুল ইসলাম রনি এলাকার মানুষের কাছে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন, বেকারদের কর্মে উদ্বুদ্ধকরণ, তরুণদের খেলাধুলায় মনোযোগী করতে বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া রনি অন্যের কাছে ভিক্ষা না চাইতে ভিক্ষুকদের পরামর্শ দিতেন। কিছু ভিক্ষুককে কাজ ও অল্প পুঁজিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন। 

মাস ছয়েক আগে হঠাৎ করে রনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত ঝরা শুরু হলে পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি। এরপর থেকে জ্বর শুরু হয়। একদিন দুদিন করে প্রায় মাসখানেক ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন রনি। এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল কাদের জিলানী ও কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পর রনির ব্লাড ক্যানসারে (লিউকোমিয়া) আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন পরিবার।

রনির ক্যানসার চিকিৎসার জন্য দরকার ছিল ৩০-৩৫ লাখ টাকা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং স্বেচ্ছাসেবীরা রনির জন্য আর্থিক সহায়তার যোগান নিয়ে এগিয়ে আসেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে রনির চিকিৎসার জন্য কাঙ্ক্ষিত টাকা সংগ্রহে ব্যঘাত ঘটে। 

শুধুমাত্র অর্থ সংকট আর উন্নত চিকিৎসার অভাবে রনিকে বাঁচানো গেল না আক্ষেপ করে তার বন্ধু সাকিব আল জামান বলেন, সম্প্রতি রনিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নেওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকদের চাহিদা অনুযায়ী অগ্রিম টাকা দিতে না পারায় রনিকে দেশে ফিরে নিয়ে আসা হয়। পরে ঢাকায় তাকে থেরাপি দেওয়া শেষে রোববার ভোরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রনি। 

এদিকে রনির অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে কৃষক বাবার পরিবার। স্থানীয়রা জানান, রনির বাবা কৃষি কাজের পাশাপাশি স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতেন। কিন্তু লোকসানের ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ক্যানসার আক্রান্ত ছেলেকে বাঁচাতে হাল ছাড়েননি। চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক খরচ জোগাতে অনেক কিছুই বিক্রি করেন। 

রনির মা রওশন আরা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি। রনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। ছেলে বড় হয়ে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করবে। কিন্তু আমাদের সেই ছেলে ক্যানসারে মারা গেল।। ওর চিকিৎসার জন্য ৩০-৩৫ লাখ টাকার দরকার ছিল। 

উল্লেখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা পোস্টে রনিকে নিয়ে ‘ক্যানসার আক্রান্ত ছেলের পাশে অঝোরে কাঁদছেন মা’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি