মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষ না হতেই ৫ দিন পরই জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন জাটকা (২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের ইলিশ) ধরা নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য বিভাগ। এই ৮ মাস জাটকা ধরা, বিক্রয়, মজুত ও পরিবহন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

তবে বড় আকারের ইলিশসহ অন্য মাছ শিকারে কোনো বাধা নেই বলেও জানিয়েছেন তারা। ফলে হতাশ ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া পাড়ের জেলেরা। মহাজনের দাদনের টাকা এবং এনজিওর ঋণের চাপ সব মিলি চরম বিপাকে রয়েছেন জেলেরা।

সোমবার (১ নভেম্বর) সকালে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা, তুলাতলী, নাছির মাঝি, ভোলার খাল, কোড়ারহাট এবং দৌলতখান উপজেলার চৌকিও বরতলাঘাটসহ বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বললে তারা নিষেধাজ্ঞার খবরে হতাশার কথা প্রকাশ করেন।

কথা হয় ইলিশা মাছঘাটের আলমগীর মাঝির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই ২২ দিনের অভিযানে নদীত যাইতে পারি নাই। অন্য কোনো কামকাইজ করি নাই। বাজারে একটা দোকানে চা-নাস্তাসহ সকল কিছু বাকি খাইছি। কইছি ২২ দিন পরে একলগে দেনা দিমু। এহন এই ৫ দিন নদীত যাই মাছ পাই তা তেলের টাকাও ওঠে না। দেনা দিমু কেমনে? তার ওপরে আবার এই জাটকা অভিযান।  দ্যেশে কী সব আইন আমাগো জাইলা গো লাইগা?’

দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাট মাছঘাটের রুহুল আমিন মাঝি বলেন, ‘অভিযানের পরে ৭ জন লগে জাল লইয়া গাঙে যাইয়া যেই মাছ পাইছি তাতে আমাগো কোনো লাভ হয় না। তেল পুইরা ৫/৭ টা মানুষ বদলা খাইটা যেই মাছ পাই তা দিয়া কিচ্ছু হয় না। বড় মাছের তো দেখা নাই। যাও দুই চাইডা জাটকা পাই হেও দিছে আবার অভিযান।’

তুলাতুলি মাছঘাটের আড়তদার মো. নাছিম বলেন, ‘২২ দিনের মা ইলিশের অভিযানে জেলেরা আমাদের থেকে টাকা নিয়ে নতুন করে জাল সাবার করছে। বিগত দিনে যেই দেনা হইছে তা এখন নদীতে যাইয়া মাছ ধইরা পরিশোধ করবে। নদীতে অভিযানের পরে যেই পরিমাণ মাছ পড়ার কথা সেই অনুযায়ী মাছ পাচ্ছে না তারা। যাও পাচ্ছে জাটকা, পাইট ও ভেলকা মাছ। এতে জেলেদের দেনা তো দূরের কথা তেলের টাকাও অঠে না। এই অভিযানে জেলেরা ধার দেনা ও এনজিওর চাপে অনেক কষ্টে থাকবে।’

ভোলা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি এরশাদ ফরাজি দাবি করে বলেন, ‘সাগর ও নদীতে জাল ফেললে ছোট-বড় প্রায় সব সাইজের ইলিশ ধরা পড়ে। জালে মাছ বাঁধার পর আর ফেলে দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় ছোট ফাঁসের জাল উৎপাদন বন্ধের দাবি উঠেছে। একই সওঙ্গ জেলেরা জাটকা ধরা বন্ধ থাকাকালীন প্রয়োজনীয় সাহায্যের দাবিও জানিয়েছেন। তাই তার দাবি, মূলত নিষিদ্ধ যেসব জাল জাটকা নিধন করছে সেসব জাল কেন ধরা হচ্ছে না?’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম জানান, মা ইলিশ ডিম ছাড়ার পর তা পর্যায়ক্রমে রেণু, জাটকা এবং পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হয়। ডিম থেকে রেণু তৈরি হওয়ার পর পরিপূর্ণ ইলিশে পরিণত হতে সময় লাগে। তাই ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের সব নদ-নদীতে জাটকা ধরা বন্ধ থাকবে। জাটকা রক্ষা করা গেলে আগামী মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন বেশি হবে বলে তার আশাবাদ।

ইমতিয়াজুর রহমান/এমএসআর