গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় ‘অচেনা প্রাণী’র আক্রমণে নতুন করে আরও তিনজন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে প্রাণীটির আক্রমণে গত দেড় মাসে আহতের সংখ‌্যা দাঁড়াল ১৩ জনে। প্রাণীটির আক্রমণে মৃত‌্যু হয়েছে ফেরদৌস মুন্সি নামের এক মসজিদের ইমামের।

গত সোম ও মঙ্গলবার তালুক কেঁওয়াবাড়ির নতুন তিনজন আহত হন। তার হলেন কিশামত কেঁওয়াবাড়ি গ্রামের আফসার আলী (৫০), খামার বালুয়া গ্রামের আবদুল হালিম (৪৫) ও দুলালেরভিটা গ্রামের ছব্বির শেখ (৫২)। তারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ আছেন।

এদিকে অচেনা প্রাণীর আক্রমণের শিকার গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছেন ঢাকা ও রাজশাহী থেকে আসা বন‌্য প্রাণী ব‌্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাসহ বন‌্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ টিম। গত দুই দিন রাত এবং দিনের বেলায় কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে প্রাণীটিকে শনাক্তের চেষ্টা করেন তারা।

বুধবার (৩ নভেম্বর) দুপুরেও তালুক কেঁওয়াবাড়িসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেন বন বিভাগের কর্মকর্তরাসহ বন‌্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ টিমের সদস‌্যরা। এ সময় নিহত ও আহতদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ‌্যে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ প্রাণীটি সম্পর্কে ধারণা নেন তারা। তাদের সঙ্গে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের একটি পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ‘তীর’ সদস‌্যরা অংশ নেন।

বর্তমানে অচেনা প্রাণীটির আক্রমণের ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে পলাশবাড়ী উপজেলার ছয়টি গ্রামের মানুষের মধ‌্যে। তালুক কেঁওয়াবাড়ি, হরিণাথপুর, কিশামত কেঁওয়াবাড়ি, খামার বালুয়া, দুলালেরভিটা ও তালুকজামিরা গ্রামের মানুষরা ভয়-আতঙ্কে আছেন। অনেকে বাইরে লাঠি হাতে চলাফেরা করছেন।

গ্রামবাসীরা বলছেন, অচেনা প্রাণীর হামলায় নারী-পুরুষ ও শিশুসহ মোট ১৩ জন আহত হয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর ফেরদৌস মুন্সি নামের এক মসজিদের ইমামের মৃত‌্যু হয়েছে। তবে প্রাণীটির গায়ের রং লাল, সাদা-ধূসর ও শরীরে ডোরাকাটা দাগ আছে। সামনের দুই পা ছোট, মুখমণ্ডল লম্বা এবং লেজ আকারে বড়। ঘটনার পর গ্রামবাসীর হাতে মারপিটের শিকার হয়ে এ পর্যন্ত তিনটি শিয়াল মারা গেছে বলেও জানান তারা।

অচেনা এই প্রাণীকে জলাতঙ্কগ্রস্ত খেঁকশিয়াল বলে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করছেন ঢাকা থেকে আসা বন‌্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ কামরুদ্দীন রাশেদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাণীটি অচেনা জন্তু কিংবা কোনো হিংস্র প্রাণী নয়, প্রাণীটি মূলত জলাতঙ্কগ্রস্ত খেঁকশিয়াল। বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ এলাকায় দুই প্রজাতির খেঁকশিয়ালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে এসব খেঁকশিয়াল জলাতঙ্ককগ্রস্ত হওয়ায় শরীরের পরিবর্তন ঘটে। হিংস্র মনোভাব থাকায় সুযোগ পেলেই তারা মানুষের ওপর হামলে পড়ে। তবে প্রাণীটিকে নিয়ে এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পরিদর্শন টিমে অংশ নেন রাজশাহী বন‌্য প্রাণী ব‌্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবীর, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন, বন্য প্রাণী গবেষক মো. রাশেদ, গাজী সাইফ ও জুয়েল রানা। এ সময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন হরিণাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রাকিব হোসেন।

রিপন আকন্দ/এনএ