উপহারের ঘরে স্ত্রী-সন্তানসহ ভালো আছেন হেলাল উদ্দিন
নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন (৫১)। এক সময় স্ত্রী ও ৪ সন্তানসহ থাকতেন মানুষের বাড়িতে। দিনমজুরের কাজ করে যা পারিশ্রমিক পেতেন তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চালাতেন। কখনো অনাহারে আবার কখনো অর্ধাহারে দিন কাটতো হেলাল উদ্দিনের।
হেলাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দাদার বাড়ি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার নলচিরা ইউনিয়নে। আমার বয়স যখন ৬ বছর, তখন বাবা মারা যান। এরপর মা আমাদের জন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করে দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়াতেন। ১৯৯১ সালে নদীভাঙনে সব মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর ৩০ বছর মানুষের বাড়িতে থাকছি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মা। তিনি আমার মতো গৃহহীনকে ঘর দিয়েছেন। জমির মালিক করেছেন। ফলে দিন শেষে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এখন আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি।
হেলাল উদ্দিনের ছোট মেয়ে মমতা (১১) ঢাকা পোস্টকে বলে, আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। এই ঘরে বসে পড়াশোনা করছি। আগে আমাদের ঘর ছিল না তাই ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারিনি। আমাদের ঘরের সামনে শিশুপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। দোলনায় দোল খেতে আমার ভালো লাগে। এখানে আমার অনেক খেলার সাথী আছে। আমরা সবাই মিলে সেখানে বিকেলে খেলাধুলা করি।
বিজ্ঞাপন
হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৪৫) ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সব সহায়তা পাই। আমাদের এখানে ২৪টি ঘর আছে। আমাদের জন্য ৪টি বিশুদ্ধ নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। সবার জন্য একটা পুকুর রয়েছে। এছাড়াও ঘরের সামনে খোলা জায়গা রয়েছে। আমরা এখানে অনেক সুখে আছি।
নোয়াখালী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাতিমা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় যাদের জমি নেই, ঘর নেই এমন ২৪ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারি খাস জমিতে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা জাহান উপমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধর্মপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পটি একটি সাজানো বাড়ি। এখানে বিদ্যুৎ সুবিধাসহ সব সুবিধা বিদ্যমান। শিশুদের জন্য রয়েছে শিশুপার্ক। শিশুদের মেধার বিকাশের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন আছে। তাদের কথা চিন্তা করে শিশুপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি দিবসে প্রতিটি ঘরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। আমরা সর্বদা তাদের খোঁজখবর রাখছি এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেবল হেলাল উদ্দিন নয়, মুজিববর্ষের উপহারের ঘর যারা পাচ্ছেন তারা সবাই গৃহহীন ও ভূমিহীন। যারা উপহারের ঘর পেয়েছেন তারা অনেক ভালো আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দেশের কেউ যেন নিজেকে পিছিয়ে পড়া অথবা অসহায় না ভাবে। এ কারণে তাদের জন্য ঘর নির্মাণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে। দেশের এক শ্রেণির মানুষ পিছিয়ে থাকবে অথবা অবহেলিত থাকবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা চান না। তিনি পিছিয়ে থাকা মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করতে চান। সেই লক্ষ্যে গৃহহীন মানুষদের জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
হাসিব আল আমিন/আরএআর