ঘরবাড়ি, কৃষি জমি, মাছের ঘের সবই ছিল কিন্তু এখন কিছুই নেই। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় এখন পরিণত হয়েছে নদীতে। নিঃস্ব হয়ে শতাধিক পরিবার বসবাস করছে বেড়িবাঁধের ওপর আর অধিকাংশই এলাকা থেকে পাড়ি জমিয়েছেন অন্যত্র।

এসব মানুষের জন্য নেই কোনো সরকারি সহায়তা। দুর্দিন আর কষ্টে দিন কাটছে তাদের। খোলপেটুয়া নদী থেকে এক কিলোমিটার দূরে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন প্রতাপনগর গ্রামের মৃত গোলাম ঘোরামীর ছেলে সাদ্দাম ঘোরামী। সম্প্রতি এই পরিবারটি ভিটেমাটিসহ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এখন বসবাস করছে খুপরিঘরে বাঁধের ওপর।

আশাশুনি উপজেলার হাজারো মানুষের নেই আশা

অসহায় হয়ে পড়া সাদ্দাম ঘোরামী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। সেই বাঁধটি আজও মেরামত করা হয়নি। ইয়াসের পর থেকেই গ্রামের মধ্যে দিয়েই জোয়ারের পানি চলাচল করে। গ্রামের মধ্যদিয়েই খাল হয়ে গেছে। আকস্মিক আমার ঘরবাড়ি, কবরস্থানসহ ভাঙনে চলে গেছে। এখন বসবাসের জায়গা নদীতে পরিণত হয়েছে। এখন কী করব, কিছুই বুঝতে পারি না। শুধু আমার নয়, এমন অবস্থা এলাকার সবারই।

একইভাবে ঘরবাড়ি, ঘের সব বিলীন হয়ে গেছে ওই গ্রামের মানিক হাওলাদারের। তিনি জানান, ১৫ বিঘা মাছের ঘের ছিল সব চলে গেছে। ঘরবাড়িও গেছে নদীতে। কৃষিজমি পরিণত হয়েছে খালে। দিন দিন এলাকার চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। জোয়ারে ডুবি আর ভাটায় জাগি এমন অবস্থায় রয়েছি আমরা। এখন এমন অবস্থায় যে, থাকার জায়গাটুকুও নেই। নিরুপায় হয়ে বাঁধের ওপর খুপরিঘর তৈরি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।

আম্পান ও ইয়াসের সময় ১৫ স্থানে ভেঙে যায় বেড়িবাঁধ

প্রতাপনগর গ্রামের সাইদুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্পানের পর ইয়াসের প্রভাবে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। সেই বাঁধ আজও মেরামত করা হয়নি। বর্তমানে মেরামত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে মেরামতের আগেই নিঃস্ব হয়েছেন প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। কুড়িকাওনিয়া, বন্যতলা, হরিশখালি, দৃষ্টিনন্দন, দরগাতলা এলাকায় গৃহহীন হয়ে পড়েছেন চার শতাধিক পরিবার। বর্তমানে বাঁধের ওপর বসবাস করছে শতাধিক পরিবার।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের দরগাতলা এলাকায় বাঁধের ওপর বসবাস করা মনোয়ারা বেগম বলেন, পরিবার নিয়ে বাঁধের ওপর খুব কষ্টে রয়েছি, কেউ দেখে না। থাকার জায়গা সব নদীতে চলে গেছে। গ্রামের মধ্যে বসতির জায়গাগুলো এখন নদীতে পরিণত হয়েছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেলে নৌকায় পার হয়ে যেতে হয়। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতাও আমাদের মেলেনি।

বাঁধের ওপর বসবাস করছে শতাধিক পরিবার

প্রতানগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, ইউনিয়নের ৮ হাজার ১১৮ পরিবারে ৩৬ হাজার মানুষের বসবাস। আম্পানের পর থেকেই মানুষ পানিতে ভাসছে। ইয়াসের পর সেই মাত্রা আরও বেড়েছে। এখনো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। সব মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত। কেউ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, কেউ মাছের ঘের, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। নিরুপায় হয়ে শত শত পরিবার বাঁধের ওপর বসবাস করছে। 

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হুসেইন খাঁন বলেন, আশাশুনি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। আম্পান ও ইয়াসের সময় ১৫টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এরপর দ্রুত মেরামত করা হয়। তবে বন্যতলা এলাকার বাঁধটি মেরামত করা যায়নি। এখন বাঁধ মেরামত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এমএসআর