সাফারি পার্কে বেড়ে উঠছে জাগুয়ার দম্পতি
গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কোর সাফারি জোনের সড়কঘেঁষা বন্য প্রাণী চিকিৎসাকেন্দ্র। কাছে যেতেই ভয়ংকর গর্জনে পিলে চমকে যাওয়ার দশা। পরে দেখা গেল কেন্দ্রটির পশ্চিম পাশের ভবনে লোহার বেষ্টনীর মধ্যে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়েছে দুটি প্রাণী।
বেষ্টনীর কাছে যেতেই পুরুষ প্রাণীটির কড়া দৃষ্টি আমাদের ওপর। ফটক ঘেঁষে শুয়ে থাকা প্রাণীটি কিছু সময় পরপর মাথা ঘুরিয়ে সঙ্গীনীকে দেখছিল। তুলতুলে পা টিপে পাশের কক্ষে সঙ্গীটির কাছে গিয়ে গা ঘেঁষে দাঁড়াতেই আচমকা হামলে পড়ে পুরুষ প্রাণীটি। মাদি প্রাণীটি পরাস্ত হয়ে সেখান থেকে দৌড়ে ওঠে কক্ষে থাকা মরা গাছের মগডালে। শুরু হয় তাদের স্বভাবজাত গর্জন।
বিজ্ঞাপন
প্রাণী দুটির বিষয়ে জানতে চাইলে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, দক্ষিণ আমেরিকা বা আমাজন জঙ্গলের বনভূমি সম্পর্কে জানতে গেলেই বারবার ‘জাগুয়ার’-এর কথা চলে আসবে। বাঘ ও সিংহের চেয়েও হিংস্রতায় ভয়ংকর প্রাণীটি। বাঘের শরীর ডোরাকাটা আর জাগুয়ারের গোল গোল ছোপ দাগ থাকে। দেহের গঠন চিতা বাঘেরও চেয়েও বড়।
ফাঁদে ফেলে শিকার ধরতে নানা কৌশল রপ্ত করা আছে এদের। জলে-স্থলে সমান দক্ষতার সঙ্গে এক কামড়েই শিকারকে কাবু করে দিতে পারে। গায়ানা, মেক্সিকো ও ব্রাজিলের জাতীয় পশুর স্থান দখল করে রেখেছে এই জাগুয়ার।
বিজ্ঞাপন
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, বাংলাদেশে প্রাণীর তালিকায় জাগুয়ারের নাম ছিল না। তবে ২০১৭ সালে পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে শাবক অবস্থায় পুরুষ ও স্ত্রী জাগুয়ার দুটিকে আনা হয়েছিল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। এরপর থেকেই প্রাণী দুটিকে পার্কের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক। এই দম্পতির কাছ থেকে বংশবৃদ্ধির আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান জানান, প্রাণী দুটিকে এখানো দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য বেষ্টনীতে দেওয়া হয়নি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জাগুয়ার একটি বিশেষ প্রাণী। এদের জন্য নির্দিষ্ট বা বিশেষ প্রক্রিয়ায় শেড দরকার। পরিকল্পনা করা হয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর পার্কের কোর সাফারি পার্কের বাঘ বেষ্টনীর ভেতর শেড নির্মাণ করে প্রাণী দুটিকে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। শুরু থেকেই প্রাণী দুটিকে নিবিড় পরিচর্যা আর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক, তাদের নিবিড় যত্নে নেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান জানান, সপ্তাহে ছয় দিন জাগুয়ার দম্পতিকে খাবার দেওয়া হয়। খাবার হিসেবে সাড়ে তিন কেজি করে সাত কেজি গরুর মাংস দেওয়া হয়। বাকি এক দিন মুরগি ও এক দিন আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে প্রাণী দুটিকে অভুক্ত রাখা হয়।
সাফারি পার্কের কর্মকর্তারা জানান, পূর্ণবয়স্ক জাগুয়ারের ওজন ৬৮ থেকে ১৩৬ কেজি। এদের শরীরের দৈর্ঘ্য ১৫০ থেকে ১৮০ সেন্টিমিটার। লেজের দৈর্ঘ্য ৭০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার। মাদি ১২ থেকে ২৪ মাস আর মর্দা জাগুয়ার ২৪ থেকে ৩৬ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয়। এদের গর্ভকাল ৯১ থেকে ১১১ দিন। গড়ে দুটি বাচ্চা দেয়, চারটি বাচ্চা প্রসবেরও নজির রয়েছে।
জন্মের পর সম্পূর্ণভাবে মা জাগুয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয় শাবকদের। প্রায় দুই সপ্তাহ এরা চোখও মেলে না। ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খায়। বড় হতে হতে সে শিকার করা শেখে এবং একাই চলাফেরা করে। এদের গড় আয়ু ১১ থেকে ১২ বছর। তবে বন্দি অবস্থায় ২০ বছরও বাঁচে।
এনএ