সততার পরিচয় দিতে গিয়ে বিকাশ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী। আটকে রাখা হয় তাকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে জরিমানা দিয়ে তিনি ছাড়া পেয়েছেন। 

সোমবার (৮ নভেম্বর) বরিশাল নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নগর ভবনের জননী কসমেটিকস নামে একটি দোকানে এ ঘটনা ঘটে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশুতোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতারণার ফাঁদে ফেলে জননী কসমেটিকসের বিকাশের এজেন্ট নম্বর থেকে চারটি নম্বরে ৮৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতারণা করে যেসব নম্বরে টাকা নেওয়া হয়েছে সেই নম্বরগুলো নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং দোকানদার দুজনই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা আসেন। তারা দোকানদারের সঙ্গে বসে সমাধান বিষয়টি করেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতারক চক্রের নিয়ে যাওয়া মোট ৮৮ হাজার টাকার অর্ধেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিশোধ করবেন। বাকি অর্ধেক দোকানদার ক্ষতিপূরণ হিসেবে বহন করবেন। এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার দুজনের যে কেউ বাদী হয়ে থানায় মামলা করতে পারবেন। তারা মামলা না করলেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, সকালে আমার মোবাইলের বিকাশ নম্বরে বাবা ৩ হাজার ৭৫০ টাকা পাঠান। কিছুক্ষণ পর ০১৯২৬০৩১০৫৯ নম্বর থেকে আমার ফোনে কল করে এক ব্যক্তি বলেন ভুলে আমার নম্বরে এক হাজার টাকা চলে এসেছে। তিনি টাকা ফেরত চান। সেই টাকা ফেরত দিতে গিয়ে বিপদে পড়ি। 

তিনি বলেন, প্রথম কল আসার কিছুক্ষণ পর সেই ব্যক্তি জানান- আমার টাকা ফেরত দিতে দেরি হওয়ায় তার ছোট ভাই বিকাশের হেড অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। হেড অফিস থেকে কেউ কল করলে যেন আমি তাদের কাছে সরি বলি। কিছুক্ষণ পরে আরেকটি নম্বর থেকে কল আসে। তিনি নিজেকে বিকাশ হেড অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করা হয়েছে। অ্যাকাউন্ট অ্যাকটিভ করতে হলে যে কোনো এজেন্টের দোকান থেকে কিছু টাকা আমার মোবাইলে নিতে হবে এবং আবার তা ফেরত দিতে হবে।

বিকাশ হেড অফিসের কথিত সেই কর্মকর্তার কথা অনুযায়ী  ওই ছাত্রী রূপাতলী নগরপ্লাজার নিচতলার জননী কসমেটিকসে এসে দোকানদার হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলে নিজের মোবাইল নম্বরে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা পাঠাতে বলেন। হেড অফিসের সেই কর্মকর্তা ছাত্রীর মোবাইলে কল করে আরও একটি নম্বরে (০১৬১২৫১৯৮৬৬) আরও ১৯ হাজার ৫০০ টাকা পাঠাতে বলেন। এভাবে দুটি মোবাইল নম্বরে ৮৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে জানান তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট অ্যাকটিভ হয়েছে।

পরে ব্যালেন্স চেক করে ওই ছাত্রী দেখেন তার বিকাশে কোনো টাকাই নেই। তার বিকাশের পিন নম্বর হ্যাক এবং কথিত হেড অফিস থেকে দেওয়া নম্বর ব্যবহার করে পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।

দোকানের মালিক হৃদয় বলেন, ওই ছাত্রী এসে জানান তার এবং আরেকটি নম্বরে টাকা পাঠাবেন। প্রথমে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা নেন তার নম্বরে। তখন ক্যাশ চাইলে তিনি মোবাইলে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতেই বলেন, আরও কয়েকটি নম্বরে টাকা পাঠাবেন এবং একসঙ্গে পরিশোধ করবেন। এভাবে ৮৮ হাজার টাকা পাঠানোর পরে যখন টাকা চাওয়া হয় তখন তিনি তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ফেরত দিতে গিয়ে দেখেন তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। আর যেসব নম্বরে কথা বলেছিলেন সেই নম্বরও বন্ধ। তখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের হাতে পড়েছেন।

স্থানীয় আরেক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতারণার শিকার ওই ছাত্রীকে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখেন দোকানদার। বহিরাগত কিছু লোক এসে অসৌজন্যমূলক আচরণও করেন। পরে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে বসে ঘটনার সমাধান করেন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর