অপহৃত কলেজছাত্র আমিনুর রহমান (বাঁয়ে) ও গ্রেফতার ফয়সাল

অবশেষে কপোতাক্ষ নদে পাওয়া গেল খুলনার পাইকগাছা থেকে অপহৃত কলেজছাত্র আমিনুর রহমানের মরদেহ। বুধবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পাইকগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে কপোতাক্ষ নদে আমিনুরের লাশের সন্ধানে কাজ করা হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভাটার সময় স্থানয়ীরা হত্যা স্থানের অদূরে আমিনুরের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তার লাশ উদ্ধারের পর এখন সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এর আগে মঙ্গলবার আমিনুর রহমানকে অপহরণের পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা সুরমান গাজী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে পাইকগাছার গদাইপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে ফয়সাল সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার আসামি ফয়সাল খুনের বর্ণনা দিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদলতে জবানবন্দি দিয়েছেন।। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ওই আদালতের বিচারক মো. মনিরুজ্জামান।

ফয়সালের স্বীকারোক্তির বর্ণনা দিয়ে পুলিশ জানায়, ফয়সাল রংপুর সেনানিবাসের গলফ খেলোয়াড়দের বল কুড়িয়ে দিত। সেখানে থাকা অবস্থায় একটা মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। মেয়েটি সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য তাকে আর ওয়ান ফাইভ নামে একটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য চাপ দিতে থাকে। 

এর মধ্যে ওই সেনানিবাসের কর্মকর্তারা তাকে একটি অপকর্মের জন্য সেখান থেকে বের করে দেয়। সে রংপুর থেকে পাইকগাছায় চলে আসে। কিন্তু তার মাথায় ছিল প্রেমিকাকে দেওয়া কথা। কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না ফয়সাল। টাকা সংগ্রহের জন্য বিত্তবানদের ছেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করতে থাকে সে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ধনীর সন্তানের খোঁজও পেয়ে যায় ফয়সাল। আমিনুরের পরিচিত একজনকে রক্ত দেওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। আট দিনের পরিচয়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীরতর হয়। হত্যার আগের দিন রাতে আমিনুরকে ঘটনাস্থলে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে ফয়সাল। কিন্তু ভেবেছিলেন খুনের চেয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেবে। 

পরের দিন (৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে একই স্থানে নিয়ে ভিকটিমকে জুসের সঙ্গে ১৪টি ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ায় ফয়সাল। তারা উভয়ে একসঙ্গে সিগারেট সেবন করে। অবচেতনের ভাব আসলে ফয়সাল দা দিয়ে প্রথমে আমিনুলের গলায় কোপ দেয়। ভিকটিম চিৎকার করলে ঘাড়ে আরও একটি কোপ দেয়। পরে তাকে টেনে নদীতে ফেলে দেয় ফয়সাল।

হত্যার পর ফয়সাল ভিকটিমের মোবাইল দিয়ে তার বাবার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। প্রথমে বিষয়টি তেমন একটি গুরুত্ব দেয়নি আমিনুরের বাবা সুরমান সরদার। রাতে ছেলে বাড়িতে ফিরে না আসায় বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরের দিন সকালে বাড়ির সবাই খোঁজ নিতে থাকে। এর মধ্যে আমিনুরের মোবাইল দিয়ে আবারও ফোন দেয় ফয়সাল। তখন ডিমান্ড কমিয়ে দিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করে সে। বিষয়টি পাইকগাছা থানার ওসিকে জানায় আমিনুরের বাবা। 

ওসির পরামর্শে টাকা দিতে রাজি হয় তার বাবা। পরে পরিকল্পনা মোতাবেক তিনি টাকাটা ভিলেজ পাইকগাছা ব্রিজের পাশে বটগাছের নিচে রেখে আসেন। এর আগে পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে ফেলে। ফয়সাল টাকার ব্যাগ ধরা মাত্র পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আমিনুরকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে সে। এরপর মঙ্গলবার বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে কপোতাক্ষ নদে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে বুধবার তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

মিলন/এসপি