শরণখোলা-মঠবাড়িয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ
উত্তাল বলেশ্বর নদীর রায়েন্দা-মাছুয়া নৌরুটে ফেরি চলাচলের মধ্যে দিয়ে বাগেরহাটের শরণখোলা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বুধবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে রায়েন্দা ঘাটে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন ও পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এ ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।
এ সময় শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত, বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত, শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান মিলনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ফেরি উদ্বোধন দেখতে দুই পাড়ে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।
এদিকে শরণখোলা ও মঠবাড়িয়াবাসীর ৫০ বছরের স্বপ্ন-প্রত্যাশা বলেশ্বর নদীতে ফেরি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ফেরি চলাচল উদ্বোধনের খবরে আনন্দে ভাসছেন এই অঞ্চলের মানুষ। এছাড়া ফেরি চালুর ফলে দুই আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা ও পায়রার সঙ্গে সড়ক পথে দূরত্ব কমেছে ৭০ কিলোমিটার। ফলে বাঁচবে সময় ও অর্থ।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোর লাখো মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এ ফেরি সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাগেরহাট সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর দুই তীরের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও দ্রুততর করতে রায়েন্দা-বড় মাছুয়া ফেরিঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। এ বছরের মার্চ মাসে রায়েন্দা পর্শ্বনে রাস্তা নির্মাণ শুরু হয়। অক্টোবরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হয়। এই কাজে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। মো. মাহফুজ খান প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করেছে। ফেরি চলাচল শুরু হওয়াতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ এই ফেরিতে পার হবে। সহস্রাধিক যানবাহনও চলাচল করবে এই ফেরিতে।
বিজ্ঞাপন
ফেরি উদ্বোধনী ট্রিপের চালক আব্দুর রউফ বলেন, এই ট্রিপের মাধ্যমে আমি ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। মাছুয়া থেকে রায়েন্দা ঘাটে ভিড়তে ৪০ মিনিট সময় লেগেছে আমাদের। অন্যান্য সময় হয়ত ৪০ থেকে ৫০ মিনিট লাগতে পারে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নে বাড়ি মালতি রায়ের। থাকেন বাগেরহাটের শরণখোলায়। তিনি বলেন, স্বামীর চাকরির সুবাদে শরণখোলায় থাকতে হয় আমাদের। এত কাছে নিজেদের বাড়ি থাকলেও সহজে যেতে পারি না। কারণ এত বড় নদী ট্রলারে পাড়ি দিতে ভয় লাগে। এখন ফেরি চালু হওয়াতে খুব সহজেই বাড়ি যেতে পারব। আমরা খুব খুশি।
একই উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের ওসমান, মাধুরী রানী, চুন্নু মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের একটি ফেরির দাবি ছিল। কারণ খেয়া বা ট্রলার যোগে উত্তাল এই নদী পাড়ি দিতে নানা সমস্যা হত। অবশেষে ফেরি চালু হওয়ায় বাস, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, অটো, ভ্যান-রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে। আমাদের অনেক সুবিধা হবে। সহজে মঠবাড়িয়া থেকে রায়েন্দা, বাগেরহাট, খুলনা-ঢাকা যেতে পারব।
রায়েন্দা এলাকার ডালিম, ইসলামাইল হোসেন, ঝর্ণা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, ফেরি চালু হওয়াতে আমাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, তুষখালি, ইন্দুরকানি, বরগুনার পাথরঘাটাসহ পুরো বরিশালের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। আগে খেয়ায় অনেক টাকা ভাড়া দেওয়া লাগত, আবার গন্তব্যে পৌঁছাতে সময়ও লাগত বেশি। এছাড়া উত্তাল বলেশ্বরে ট্রলারে যেতে ঝুঁকিও ছিল অনেক। এখন আমরা নিরাপদে, কম খরচে যাতায়াত করতে পারব।
এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী ইমন ব্যাপারী বলেন, মঠবাড়িয়ায় আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই আমরা যেতে-আসতে পারি না। কারণ আসতে-যেতে অনেক টাকা খরচ হয়। ফেরি চালু হওয়াতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় দারুণ পরিবর্তন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক সম্পর্কসহ নানা কারণে বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু এই যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে ছিল বলেশ্বর নদী। বলেশ্বর নদীতে ফেরি চালু হওয়ায় এই এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে।
বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার একটা বড় অংশের সঙ্গে বাগেরহাটের মানুষের যোগাযোগের জন্য বলেশ্বর রায়েন্দা-বড়মাছুয়া খেয়া ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি পায়রা থেকে মোংলা বন্দরের মধ্যে নতুন যোগাযোগ স্থাপন হবে। বলেশ্বর নদীর দুই তীরের মানুষ স্বল্প সময় এবং অল্প ব্যয়ে তাদের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে। ফেরির সুবিধা থাকাতে দুই পাড়ের মানুষের জন্য যাত্রীবাহী গণপরিবহনও চালু হবে।
বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন বলেন, অবস্থানগত কারণে বাগেরহাট এবং পিরোজপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি ফেরির। অবশেষে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ফেরি চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এই জনপ্রতিনিধি।
তানজীম আহমেদ/আরএআর