রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক মামলা থেকে রেহাই পেতে স্বামী সেরাজুল ইসলাম (২৭) বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি আশঙ্কামুক্ত হলেও তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বুধবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। সেরাজুল ইসলাম উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ঝাড়পাড়ার আবু বক্করের ছেলে।

উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য রজনী কান্ত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মহিলা বিষয়ক অফিসারের কার্যালয় সংলগ্ন স্থানে হঠাৎ লোকজনের চিৎকার শুনে  গিয়ে দেখি একজন বিষপান করেছেন। পরে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে জানতে পারি তার স্ত্রীর যৌতুকের মামলা করেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে।  

এদিকে পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর পারিবারিকভাবে সেরাজুলের বিয়ে হয় একই উপজেলার বিষ্ণুপুরের ছোট হাজীপুর খুটুপাড়ার আনিছুল ইসলামের মেয়ে আদুরী বেগমের (২১) সাথে। বিয়ের পর থেকে দু’লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছিল স্বামীর পরিবার। তারপরও তিনি সংসার করেছেন সেরাজুলের সাথে। ফলে তাদের ঘরে একটি সন্তানও জন্ম নেয়। তবে যৌতুকের দাবি করতে থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন আদুরী। এ কারণে তিনি প্রথমে বদরগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন।

থানা পুলিশ ব্যবস্থা না নিয়ে আদালতে মামলার পরামর্শ দেয়। পরে আদুরী গত ২৮ জুন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্বামী ও ননদসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি তদন্তের জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এরই মধ্যে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেননি।

এ বিষয়ে সেরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তার আশঙ্কা তদন্ত প্রতিবেদন তার বিপক্ষে যাবে। এমনটা হলে তিনি স্ত্রী আদুরীকে হারাবেন। এ আশঙ্কা থেকেই বুধবার মহিলা বিষয়ক অধিদফতর সংলগ্ন স্থানে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

স্থানীয় সাবেক ইউপি মেম্বার আন্জুয়ারা বেগম সেরাজুল সম্পর্কে বলেন, তার ভিটেমাটি বলতে মাত্র ৬ শতক জমি ছিল। সেটিও বিক্রি করেছেন। এ কারণে তার স্ত্রী এখন স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করছেন। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই