সকালের সোনা রোদে ঘাসের ডগায় শিশির কণার ঝলকানি মনে করে দিচ্ছে শীতের আগমন। সেইসঙ্গে গত তিন দিনের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমায় বুঝতে বাকি নেই জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। তবে হঠাৎ শীতের আগমনে হাসপাতালে বাড়তে শুরু করেছে ঠান্ডাজনিত রোগী। 

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেওয়া তথ্য মতে, প্রায় প্রতিদিনই ৩০০-৪০০ শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে হাসপাতালে। যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি। 

অক্টোবর মাসে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ২২ হাজার ৫২৬ জন রোগী। এর মধ্যে শুধু সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শীতের শুরুতে শিশু ও বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া, শ্বাসনালী তন্ত্রের প্রদাহ, ফুসফুস, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

সোমবার (১৫ নভেম্বর) সকালে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আশুলিয়ার নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীর চাপ তুলনামূলক বেড়েছে। রোগীদের অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ।

সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত শিশু ইউসুফকে কোলে নিয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসেছেন মা আমেনা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি একজন পোশাকশ্রমিক। আমার শিশু সন্তানকে বাসায় রেখে কাজে যেতে হয়। খুব বেশি যত্ন নিতে পারি না। ছেলেটি কয়েকদিন ধরে সর্দি জ্বরে আক্রান্ত। তাই চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার দেখালে একটু স্বস্তি মিলবে।

শিশু আমির ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। তাকেও আনা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। তার বাবা আহমেদ বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। আমার ছেলে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এজন্য দেরি না করে ডাক্তার দেখাতে এনেছি। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়েছেন। 

চিকিৎসা নিতে আসা সাত বছর বয়সী বিথীর সঙ্গে কথা হলে সে বলে, হঠাৎ শীত চলে এসেছে। আমি বৃষ্টিতে ভিজিনি, কিছুই করিনি।  তারপরও আমার প্রচন্ড সর্দি, কাশি ও হালকা জ্বর। রাতে ঘুমাতে পারি না। আমার জন্য বাবা-মাও ঘুমাতে পারে। অবশেষে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শাহাদাৎ জামিল ঢাকা পোস্টের মাধ্যমে এসব রোগীদের সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিশুদের ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। শিশুদের খাবার এবং খাবারের পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত থাকতে হবে। পচা বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। নাক-মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে। পরিষ্কার কাপড় পরিধান করাতে হবে। যিনি শিশুকে খাওয়াবেন তাকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। 

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মর্কতা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, এমন পরিস্থিতির জন্য আমরা সর্বদাই প্রস্তুত ছিলাম। যদিও হিমশিম খাওয়ার মতো রোগীর চাপ নেই। তারপরও আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি। শিশু রোগীর জন্য আলাদা আইএনসিআই কর্ণার আছে। যেখানে একজন শিশু কনসালটেন্ট, একজন মেডিকেল অফিসার, একজন এসএসএমও, একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স দায়িত্ব  পালন করছেন। শীতের শুরুতে শীতজনিত রোগের একটু প্রকোপ বাড়ে। এজন্য শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। শিশুর ঠান্ডা যাতে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে মোটা কাপড় পরিধান করাতে হবে। 

এসপি