জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও দুমুঠো ভাত আর থাকার একটি ঘরের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে ৮৫ বছর বয়সী উপেন চন্দ্রকে। জীবিকার তাগিদে এ বয়সেও ক্র্যাচে ভর করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরতে হয় মানুষের দ্বারে দ্বারে। তবে এখনো তিনি স্বপ্ন দেখেন, হয়তো কোনো একদিন শেষ হবে তার এই জীবন সংগ্রাম।   

উপেন চন্দ্রের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সাজগা গ্রামে। এলাকায় ভেলসু নামে পরিচিত উপেন ছোটবেলা থেকেই কাজ করেন অন্যের বাসায়। কাজেও ছিলেন বেশ পটু। তবে বয়স হওয়ায় এখন আর পারেন না। বিয়ের পর সংসারও টেকেনি তার। স্ত্রী-সন্তান নেই। সময়ের ব্যবধানে এখন শুধুই শূন্যতা উপেনের। 

উপেনের ছোট ভাইয়ের বউ কালো সরি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিজেই অনেক গরিব। অন্যের বাসায় কাজ করে খাই। থাকার একটা ঘর ছাড়া কিছুই নেই আমাদের। আমাদের ঘরের বারান্দায় থাকেন তিনি। যতটুকু পারি দাদাকে সহযোগিতা করি। তিনি নিজেও সকাল হলেই ঘুম থেকে উঠে বের হয়ে যান। সারাদিন বাইরে থাকেন এবং খান। রাতে এসে শুধু ঘুমান। 

কেমন আছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে উপেন বলেন, ভালো নেই। থাকার ঘর, চলাচলের গাড়ি আর চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার৷ কিছুই নেই আমার। 

স্থানীয় খগেন চন্দ্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপেন দাদার থাকার জায়গা নেই। সবাই মিলে লাঠি (ক্র্যাচ) কিনে দিয়েছে। সেটা নিয়েই সাহায্য তুলে নিজের খাবার ও ওষুধ কেনেন। পায়ে ব্যান্ডেজ। বর্তমানে তার চিকিৎসা জরুরি হয়ে গেছে। এখন অনেক শীত। শীত নিবারণ ও চিকিৎসার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। 
 
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ওয়াহাব আলী জানান, আমরা তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। বর্তমানে তার অবস্থা নাজুক। আমি কথা বলে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

এ বিষয়ে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ভূলন বালা ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপেন আমার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। থাকার ঘর এবং চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করা দরকার। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি। দেখা যাক কী করা যায়।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামালপুরের উপেনের বিষয়টি আমি শুনেছি। কীভাবে তাকে সহযোগিতা করা যায় তা ভেবে দেখব। মুজিববর্ষের ঘরসহ যেসব সরকারি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তিনি যেন পান আমরা তার ব্যবস্থা করব।

আরআই/জেএস