‘আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি। আমি বাংলার আলোপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি। চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে। তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে?’ কবি সৈয়দ শামসুল হক তাঁর ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় এভাবেই বাংলা আর বাঙালির পরিচয় দিয়েছেন।

কবির এই ভাষাগুলোকে ‘রঙের খেলা, ছবির মেলা’র মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন মৌনবীণা চারুকলা একাডেমির চিত্রকররা।

জয়পুরহাট জেলা শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে শুক্রবার শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। যেখানে স্থান পেয়েছে দুই শতাধিক ছবি। শিল্পীরা সেই ছবিগুলোর মাধ্যমে এই বাংলার প্রকৃতির রূপ-রং-রসকে ফুটিয়ে তুলেছেন। যা দেখে শিশুরা বাংলার ষড়ঋতু আমাদের কতটা সমৃদ্ধ করেছে তা শিখতে পারবে।

চিত্রকর্মগুলোতে বিভিন্ন কবির বিখ্যাত কবিতার কিছু চরণ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

যেমন, কবি জসীমউদ্দীনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা, ফুল তুলিতে যাই। ফুলের মালা গলায় দিয়ে, মামার বাড়ি যাই।’ কবি জীবনানন্দ দাশের ‘অঘ্রান প্রান্তরে’ কবিতার ‘জানি আমি, তোমার দুচোখ আজ আমাকে খোঁজে না আর পৃথিবীর পরে’।

মৌনবিণা শিশু কিশোর চারুকলা একাডেমির চিত্রকর মাহবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা নানা রকম সাংস্কৃতিক উৎসব ও কাজকর্ম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। আমাদের সময় যে বর্ণিল শৈশব ছিল তা কিন্তু বর্তমান সময়ের শিশুদের নেই এবং তারা নানা কারণে এসব পায় না। ছবি আঁকা কিছুটা খেলাধুলার মতোই। অন্তত ছেলে-মেয়ের এই রঙের খেলা দিয়ে ছবি আঁকার সাথে যুক্ত থাক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো এমন ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ পৃথিবীতে আর কোথায় পাওয়া যায়! আমাদের ভেতরে এখনো প্রকৃতি প্রেম জাগ্রত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে দুই শতাধিক ছবির প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই প্রকৃতিকেই তুলে ধরা হয়েছে।

প্রদর্শনী দেখতে আসা মিশু নামের একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে ছবি দেখার জন্য বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। ছবি দেখে বাচ্চারা অনেক খুশি এবং আমাদেরও খুব ভালো লেগেছে। এই আয়োজনে অনেক চিত্রকর্ম করা হয়েছে। আমি চাই এরকম অনুষ্ঠান আমাদের জয়পুরহাটে আরও হোক। আর বাচ্চারা এসব দেখে অনুপ্রাণিত হবে এবং ছবি আঁকার প্রতি তাদের আগ্রহ আসবে।

মৌনবিণা শিশু কিশোর চারুকলা একাডেমির সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরবর্তী প্রজন্মকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সচেতন করার জন্য এই চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

জয়পুরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দেবাশীষ দত্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, মনের ভিতরে যে বীণা বাজে সেই বাজা বীণাটার বহিঃপ্রকাশ এই চিত্রকর্ম। এগুলোর চর্চা বাংলাদেশে এখন খুবই কম। অনেক আগে গোষ্ঠীগত এসব চর্চা হতো। কিন্তু এখন তা নেই। বর্তমানে এসব চিত্রকর্ম করে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে মানুষের সুকুমার বৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। মানুষের মধ্যে কোনো কূপমণ্ডূকতা, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিবিদ্বেষ এমন বিষয়গুলো কমে যাবে। আমার মনে হয় এ ধরনের অনুষ্ঠান বা মেলা দেশব্যাপী করা উচিত।

এর আগে শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে মৌনবীণা চারুকলা আয়োজিত ‘রঙের খেলা, ছবির মেলা’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর দেবাশীষ দত্ত। এতে উপস্থিত ছিলেন, মৌনবিণা শিশু কিশোর চারুকলা একাডেমির সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক চিত্রকর মাহবুব আলম, জয়পুরহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খ.ম আব্দুর রহমান রনি প্রমুখ।

চম্পক কুমার/আরআই/জেএস