প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। আলু, পেঁয়াজ ও তেলের দাম বাড়লেও মোশাররফ হোসেনের এক টাকার শিঙাড়ার দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। দাম এক টাকায় রয়ে গেছে। ৩০ বছর ধরে তিনি এক টাকা দামেই শিঙাড়া বিক্রি করছেন।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার ত্রিবেণীর মর্গান নদীর তীরে মোশাররফ হোসেনের এক টাকার শিঙাড়ার দোকান। শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে দোকানটির অবস্থান। এখানেই তিন দশক ধরে এক টাকার শিঙাড়া বিক্রি করছেন তিনি। প্রতিদিন কয়েক হাজার শিঙাড়া বিক্রি হয়।

মোশারফ হোসেনের এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। শিঙাড়া বিক্রির লাভের টাকা দিয়ে ভালোভাবেই চলছে তার সংসার। শিঙাড়া বিক্রি করে কিনেছেন কয়েক বিঘা জমি। হাকিয়েছেন একতলা বাড়ি। বাজারে আরও দুটি দোকান, মাছের পুকুর ও কয়েকটি গরু রয়েছে। সব মিলিয়ে ভালোভাবেই চলছে তার সংসার।

শিঙাড়া বিক্রেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, শিঙাড়া তৈরির কাজে আমার স্ত্রী সহযোগিতা করেন। জীবনের অর্ধেক সময় শিঙাড়া বিক্রি করে পার করেছি। যতদিন বেঁচে থাকব এই পেশার সঙ্গেই থাকব। এমনকি জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমার শিঙাড়ার দাম বাড়বে না।

তিনি বলেন, আমার বাবা আমাকে কোনো সম্পত্তি দিয়ে যাননি। আমার ধৈর্য্য আর পরিশ্রমের ফলে আজ স্বাবলম্বী হতে পেরেছি। তবে আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে আমার মায়ের দোয়া ছিল। কারণ আমি সবসময় বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছি।

মোশাররফের এলাকার বাসিন্দা রতন কর্মকার বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি তিনি এক টাকায় শিঙাড়া বিক্রি করে আসছেন। শিঙাড়া খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ছুটে আসেন। শিঙাড়া বিক্রির লাভ থেকেই মোশাররফ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

এক টাকার শিঙাড়ার দোকানটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসের কাছে অবস্থিত। ফলে ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্টের একঘেয়েমি দূর করতে আড্ডা দিতে শিক্ষার্থীরা মোশাররফের দোকানটিকে বেছে নেয়।

শিঙাড়া খেতে যাওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিম বলেন, বর্তমানে এক টাকায় কিছুই হয় না। সেখানে তিনি এক টাকায় শিঙাড়া বিক্রি করছেন। শিঙাড়া খেতেও ভারী সুস্বাদু। আসলে এরকম কিছু মানুষের জন্য পৃথিবী আরও সুন্দর হয়ে উঠে।

এসপি