চলনবিলের সুস্বাদু পাবদা যাচ্ছে ভারতের পাঁচটি অঞ্চলে
সিংড়ার চলনবিল এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সুস্বাদু পাবদা চাষ
উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ পাবদা। সিংড়ার চলনবিল এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সুস্বাদু পাবদা মাছের চাষ। খুব অল্প সময়ে বেকার যুবকরা এ চাষ করে নিজের পরিবারের অভাব-অনটন দূর করছে। অন্যদিকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সুস্বাদু এ মাছ এখন রপ্তানি হচ্ছে ভারতের পাঁচটি অঞ্চলে।
এ মুহূর্তে ভারতের পাঁচটি অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, মালদাহ ও দার্জিলিং, কাশ্মীর ও মুম্বাইতে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে রপ্তানি হচ্ছে পাবদা ও গুলসা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ মাছ রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানান রপ্তানিকারকরা।
বিজ্ঞাপন
মৎস্য বিভাগ জানায়, অল্প কয়েকজন চাষির মাধ্যমে শুরু হয়ে এখন পাবদাচাষির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০-তে। আর গেল মৌসুমে ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি পাবদা উৎপাদিত হয়েছে। গত ৩ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি টাকার পাবদা মাছ। সামনের মৌসুমে উৎপাদন আরও বেশি হবে বলে আশা করছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন বেসরকারি হ্যাচারি থেকে খামারিরা পোনা সংগ্রহ করে আনেন। পরবর্তী সময়ে সেগুলো পুকুরে মিশ্র ও দানাদার খাবার খাইয়ে বড় করা হয়। সাধারণত এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে দেড় লাখ টাকা খরচ করে প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যায়। পুকুর পাড় থেকেই গড়ে ৩৩০ টাকা কেজি দরে পাবদা বিক্রি হয়। সঙ্গে পানির পরিবেশ ঠিক রাখতে পুকুরে রাখা হয় অন্য জাতের মাছ।
বিজ্ঞাপন
পাবদা খামারি অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল জানান, পাবদা মাছের গঠন ঠিক রাখতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় দানাদার খাবার। বিক্রিতেও রয়েছে সুবিধা। দেড় শ কিংবা ২০০ মণ― যে পরিমাণই মাছ ধরা হোক না কেন, তা পুকুরপাড় থেকেই কিনে নিয়ে যান ঢাকা, বগুড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বড় পাইকাররা। ফলে লাভ ও বিক্রয়সুবিধা পাওয়ায় পাবদা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।
মৎস্যচাষিরা জানান, অন্যান্য ব্যবসা কিংবা পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সহজে পাবদা মাছ চাষ করা যায়। বছরে কেউ কেউ প্রায় আড়াই লাখ টাকার পাবদা মাছ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। পাবদা মাছের সঙ্গে আরও অন্য মাছের চাষ করতে হয় পানি ঠিক রাখার জন্য। যাকে বলে মিশ্র চাষ।
অপর এক খামারি জানান, পাবদা মাছ চাষে বর্তমানে বেশি আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এ মাছ বিক্রি করতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। মাছ পুকুরপাড় থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক চাষি এখন এ মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। তিনি আরও জানান মৎস্য বিভাগ আমাদের বিভিন্নভাবে ট্রেনিং দিচ্ছে, কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা এসে পুকুরের পানি পরীক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
রপ্তানিকারক রিগান জানান, প্রতিবছর চলনবিল এলাকা থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ মে. টন পাবদা বিভিন্ন জেলা এবং ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে। এ মাছ সাত দিন ভালো থাকে। স্থানীয়ভাবে প্যাকেটজাত হয়ে বেনাপোল হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সিংড়ার কৃতী সন্তান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কারণে কোথাও চাঁদাবাজির শিকার হতে হয় না আমাদের। খুব সহজে গাড়ি বিভিন্ন জেলায় যায়। তিনি এ মাছ আরও দেশে রপ্তানি করতে সরকারি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।
নাটোরে অনেক আগ থেকেই মাছ চাষ হয়। ইদানীং দেশীয় প্রজাতির পাবদা, গুলসা, শিং, মাগুর, মলা, গলদা চিংড়ি এগুলোর ব্যাপক হচ্ছে। আমরা চাষিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি গুড অ্যাকোয়াকালচারের ওপরে। এতে যদি চাষিরা অভ্যস্ত হয়ে যান, তাহলে বিদেশে মাছ রপ্তানি অনেক সহজ হয়ে যাবে।
জাহাঙ্গীর আলম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা
পাবদা রপ্তানিকারক সাজু হোসেন জানা, চলনবিলের যে পাবদা ভারতে রপ্তানি হয়, তা যদি বিশ্বের আরও দেশে রপ্তানি হতো, তাহলে আরও ভালো হতো। এবার পাবদার মোটামুটি দাম কম। তবে আরেকটু দাম হলে ভালো হতো। এ ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। আর কোন দেশে রপ্তানির সম্ভাবনা আছে, এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, কাতার― এসব দেশে রপ্তানির সম্ভাবনা আছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লাহ ওয়ালিউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে জানান, কৃষির যেকোনো সেক্টরের তুলনায় পাবদা চাষ লাভজনক। এই চাষ বৃদ্ধিতে নিয়মিত খামারিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিক্রিতেও সহযোগিতা করছে মৎস্য বিভাগ।
ওয়ালিউল্লাহ জানান, উৎপাদিত এসব পাবদা মাছ ভারতে এলসির মাধ্যমে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশীয় বিভিন্ন বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ভালো লাভবান হচ্ছেন খামারিরা। সাধারণত মার্চ মাসের শুরুতে পুকুরে পাবদা পোনা ছাড়া হয় এবং ছয় মাস পর থেকে তা সংগ্রহের উপযোগী হয়। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় পাবদা খামারিরা দিন দিন লাভবান হচ্ছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, নাটোরে অনেক আগ থেকেই মাছ চাষ হয়। ইদানীং দেশীয় প্রজাতির পাবদা, গুলসা, শিং, মাগুর, মলা, গলদা চিংড়ি এগুলোর ব্যাপক হচ্ছে। নাটোর জেলার বেশির ভাগ মাছ যায় ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে। কিন্তু পাবদা ও গুলসা এটা ভারতেও যায়। আমরা চেষ্টা করছি যদি এ রপ্তানি বাড়ানো যায়, তাহলে এখানকার মৎস্যচাষিরা লাভবান হবেন। আমাদের দেশের জন্য এটা অনেক উপকারে আসবে। এ জন্য আমরা চাষিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি গুড অ্যাকোয়াকালচারের ওপরে। এতে যদি চাষিরা অভ্যস্ত হয়ে যান, তাহলে বিদেশে মাছ রপ্তানি অনেক সহজ হয়ে যাবে।
এনএ