মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বাবার লাশ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মেয়ে রাজিয়া ইসলাম নিছা। রোববার (২১ নভেম্বর) উপজেলার পতনঊষার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

জানা যায়, রোববার ভোরের দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা মিজানুর রহমান বাবু (৪৫) সিলেট উইমেন্স মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান। শোকে বিহ্বল স্বজনরা নিচ্ছিলেন লাশ দাফনের প্রস্তুতি। এমন অবস্থায় বাবার লাশ বাড়িতে রেখে মেয়েকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে।

রোববার সকাল ১০টার আগে চোখ মুছতে মুছতে কেন্দ্রে যায় ওই শিক্ষার্থী। সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় দ্বিতীয় দিনের ভুগোল পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে বাবার লাশ দাফনে অংশ নেয়। 

রাজিয়া ইসলাম নিছা এবার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

স্বজনরা জানায়, রোববার নিছার দ্বিতীয় দিনের এসএসসি পরীক্ষা ছিল। এর মধ্যে তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভোরে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল হাসপাতালে মারা যায়। মৃত্যুর পর বাবাহারা নিছা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পরে স্বজন ও শিক্ষকদের উৎসাহে সে উপজেলার মুন্সীবাজার কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে অংশগ্রহণ করে।

পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ ফয়েজ আহমেদ জানান, নিছার বাবার মৃত্যুর খবর শুনে সকালে তার বাড়িতে গিয়ে শান্ত্বনা ও উৎসাহ দিয়েছি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।

কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষা সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র কুমার পাল বলেন, নিছা সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা তার সার্বক্ষণিক খেয়াল রেখেছি।

পরীক্ষা শেষে রাজিয়া ইসলাম নিছা বলেন, বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। বাবা চাইতেন আমি যেন পড়ালেখা করে অনেক বড় হই। তাই এমন অবস্থায়ও আমি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। বাবার আত্মাকে আমি কষ্ট দিতে চাই না।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, বাবাকে হারানো যে কারও জন্য খুবই কষ্টের ব্যাপার। তারপরও এসএসসি পরীক্ষার্থী রাজিয়া বাবা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আমরাও তার পরীক্ষার সময় যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। 

ওমর ফারুক নাঈম/এসপি